চুনতী সীরাত মাহফিল: দক্ষিণ চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার বৃহৎ মিলনমেলা

Posted by

চুনতী সীরাত মাহফিল১৯ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক ‘চুনতী সীরাত মাহফিল’ প্রবর্তন করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতীর মহান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ প্রকাশ (শাহ সাহেব কেবলা) (রহ.)।

১৯৭২ সালের ১১ রবিউল আউয়াল প্রতিষ্ঠিত প্রিয় নবীজির সীরাত বর্ণনার এ ঐতিহাসিক মাহফিলটি এখনো জারি রেখেছেন।

সীরাত মাহফিল প্রতি বছর ১১ রবিউল আউয়াল বাদে যোহর শুরু হয়ে ২৯শে রবিউল আউয়াল ফজর আজানের পূর্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের আমিন-আমিন ধ্বনিতে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

২০২০ সালে এই মাহফিলের ৫০তম বার্ষিকী অতিক্রম করেছে। (শাহ সাহেব কেবলার) জীবদ্দশায় ১২টি মাহফিল ও ইন্তিকালের পর ৩৯ টি মাহফিল পার হয়ে এখন এবার ৫২ তম মাহফিল চলবে।

মাহফিলের নাম কীভাবে ‘চুনতী সীরাত মাহফিল’ হল

১৯ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক চুনতী সীরাত মাহফিলহযরত শাহ সাহেব (র.) স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও দ্বীন দরদী মানুষদের একই প্ল্যাটফরম জড়ো করে; ১৯৭২ সালে একদিনের মাহাফিলের প্রবর্তন করেন।

পরবর্তী বছর ১৯৭৩ সালে মাহফিল শুরুর আগে নামকরণের জন্য তৎকালীন স্বনামধন্য আলেম ও গণ্যমান্য বক্তিবর্গদের নিয়ে পরামর্শ সভার আয়োজন করেন শাহ সাহেব কেবলা।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

সেই সভায় মাহফিলের নাম মিলাদুন্নবী, ইয়াউম্মুন্নবী ও সিরাতুন্নবী প্রস্তাব এলে তিনিই সিরাতুন্নবী নাম রাখার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

সেই থেকেই সিরাতুন্নবী নামেই এ মাহফিলটি প্রতি বছরের রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 যেভাবে ১ দিন থেকে ১৯ দিনের মাহফিল

১৯৭২ সালে রবিউল আউয়াল মাসের ১১ তারিখে চুনতি শাহ মঞ্জিল চত্বরে ১ দিনব্যাপী সীরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তী ১৯৭৩ সালে ৩ দিনব্যাপী, ১৯৭৪ সালে ৫ দিন, ১৯৭৬ সালে ১০ দিন, ১৯৭৭ সালে ১২ দিন, ১৯৭৯ সালে ১৫ দিন এবং একই বছর ২ দিন বাড়িয়ে ১৭ দিন, আরো ২ দিন বাড়িয়ে ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী মাহফিল করা হয়।

সেই ১৯৮০ সাল থেকেই ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

চুনতী সীরাত মাহফিল এলাকাবাসীর প্রাণ

সীরাত মাহফিলকে কেন্দ্র করে পুরো চুনতি এলাকায় যেন ঈদের আনন্দ বিরাজ করে। প্রতিটি বাড়ি মেহমানে ভরপুর থাকে।

এছাড়া, টানা ১৯ দিন এলাকার শত শত মানুষ রাত-দিন সমানতালে মাহফিলে আগত ধর্মপ্রাণ হাজার হাজার মানুষের খানাপিনার এন্তেজাম করতে ব্যস্ত থাকেন।

এলাকাবাসীর পাশাপাশি এ মাহফিল এন্তেজামে পরিশ্রম করেন চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দরা।

প্রতিদিন একসাথে আড়াই হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুদের খাবার পরিবেশেন করা হয় মাহফিলে। কিন্তু আড়াই হাজার মানুষকে একসাথে খাবার পরিবেশনে সময় লাগে ১০/১৫ মিনিট!

আখেরি মুনাজাত

আখেরি মুনাজাত১৩ একর আয়তনের সীরাত ময়দান ছাড়িয়ে লোকে লোকারণ্য আশপাশের গ্রাম-রাস্তা-ঘাট। ভোরে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ। হু হু করে কাঁদছে লাখো মানুষ।

নিজেদের অতীত জীবনের পাপমোচন, বরকতময় জিন্দেগি ও জালিমের জুলুম থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করার প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে।

মুহুর্মুহু আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত পুরো এলাকা।

১৯ দিনব্যাপী চুনতী সিরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের আখেরি মুনাজাতের চিরায়ত দৃশ্য এটি।

শেষ কথা

আশেকে রাসুল খ্যাত হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (র.) প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (স.) মাহফিল এতদঞ্চলে নবীপ্রেমিক মুসলমানদের মিলনস্থল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এই মাহফিলের সুনাম ও সুখ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার বৃহৎ মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

মাহফিলে দেশের বিখ্যাত আলেম-ওলামারা নির্ধারিত বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করে থাকেন।

এছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়।

আখেরি মোনাজাতে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার থেকে এসে অনেকে অংশগ্রহণ করেন। এ দিন লাখ লাখ মুসল্লির ঢল নামে এ মাহফিলে।

মতামত দিন