ভয়েস অফ আমেরিকা – ভিওএ বাংলা অনুষ্ঠান

Posted by

ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) বাংলা হচ্ছে বাংলাভাষী মানুষের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম। এটি  যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় মাল্টি মিডিয়া সংবাদ মাধ্যম।

ভয়েস অফ আমেরিকা

১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় মাল্টি মিডিয়া সংবাদ মাধ্যম। এই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম শ্রোতা ও দর্শকদের কাছে সত্য, সার্বিক, নিরপেক্ষ খবর পৌছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউ এস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (U.S. Agency for Global Media) অংশ হিসেবে ভিওএ পুরোপুরি আমেরিকান জনগনের অর্থায়নে পরিচালিত।

ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) মূলত যে সব দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বা জনগন সীমিত সংবাদ পায়, তাদের কাছে ‘৪৫টিরও বেশী ভাষায়’ খবর পৌছে দেয়।

আইনগত ভাবে এই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মিশন এবং সম্পাদনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আমেরিকান আন্তর্জাতিক সম্প্রচার আইন পাশ করে।

ওই আইনের ফলে ভিওএর সাংবাদিকরা কোন সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনীতিকের প্রভাব, চাপ বা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে রক্ষা পান।

এর আগে  ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড আর ফোর্ড ভিওএ সনদে সাক্ষর করেন। ওই সনদে বলা হয়:

  • ভিওএ সবসময়ই খবরের নির্ভরযোগ্য এবং কর্তৃত্বপূর্ণ সূত্র হবে। ভিওএর সংবাদ হবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ এবং সার্বিক।
  • ভিওএ, আমেরিকান সমাজের কোন বিশেষ অংশের নয়, পুরো আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করবে ।
  • সে কারণে ভিওএর পরিবেশনায়, উল্লেখযোগ্য ভাবে আমেরিকান চিন্তা ধারা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষম ও সর্বাঙ্গীণ প্রতিফলন থাকবে।
  • ভিওএ, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালা, সুস্পষ্ট ও কার্যকর ভাবে উপস্থাপন করবে।
  • এছাড়াও ওই সব নীতিমালার বিষয়ে দায়িত্বপূর্ণ আলোচনা এবং মতামত পরিবেশন করবে ভিওএ ।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

অন্যদিকে, ২০১৬ সালে কংগ্রেস পুনরায়, জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনের অধীনে বলা হয় ভয়েস অফ আমেরিকাকে (ভিওএ) সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচারের কাজ নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, ভিওএর সাংবাদিকরা প্রতিদিন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন এমনটা মনে করেন অনেকেই।

ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) বাংলা

ভয়েস অফ আমেরিকা- ভিওএ বাংলাভিওএ বাংলা ( VOA Bangla) হচ্ছে ভয়স অফ আমেরিকা’র বাংলা বিভাগ। বাংলাভাষী মানুষের এক সময়ের সবচেয়ের জনপ্রিয় গনমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকা- ভিওএ বাংলার যাত্রা শুরু ১৯৫৮ সালের ১লা জানুয়ারি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন বাজারে এলেও তখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম বলতে সবাই বেতারকেই চিনত, বেতারই শুনত।

তখনকার প্রেক্ষাপটে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র বাংলাভাষী জনগণের জন্যই মূলত বাংলায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে ভয়েস অব আমেরিকা।

বিশ্বব্যাপী ভয়স অফ আমেরিকার সংবাদদতাদের পাঠানো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদের এক নিশ্চিৎ উৎস।

বর্তমানে ভিওএ বাংলা থেকে প্রতিদিন রাতে আধা ঘণ্টা নৈশ অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। অন্য দিকে, ভিওএ বাংলা এর অনলাইন সংস্করণ মূলধারার গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে।

ভিওএ বাংলা যে কেবল সংবাদ পরিবেশন করছে তাই নয় অভিজ্ঞ বেতার সাংবাদিক ও সম্প্রচারকদের শ্রম ও মেধায় বেতার, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে, সংবাদ, সংবাদভাষ্য ও বিশ্লেষণ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, শিল্প ও বিনোদন, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান, শিক্ষা ও যুবসংবাদ, খেলাধুলোর খবরা খবরসহ প্রতিদিন নানান ধরণের অনুষ্ঠান উপস্থাপন করছে অগণিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে।

ভিওএ রেডিওতে প্রচারিত সাপ্তাহিক আয়োজন কল ইন শো হ্যালো ওয়াশিংটনে বিশিষ্ট প্যানেলিস্টরা বিভিন্ন সমসাময়িক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন।

প্রতি শনিবার রাতে এনটিভিতে সাপ্তাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান হ্যালো আমেরিকাতে আমরা তুলে ধরছি আমেরিকান জীবনের নানান দিক, বাঙালি আমেরিকানদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম, তেমনি থাকছে বিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার।

ভিওএ এর অন্যান্য টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এটিএন বাংলা চ্যানেলে সরাসরি আমেরিকা, দেশ টিভিতে ভিওএ সিক্সটি।

পাশা-পাশি মাল্টি-মিডিয়ার এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব ভিওএ বাংলা।

বাংলা অনুষ্ঠানের প্রচার সময় ও তরঙ্গ (বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত)

  • প্রচার সময়ঃ বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ১০ টা থেকে ১০.২৯ মিনিট পর্যন্ত।
  • প্রচার তরঙ্গঃ ১৫৭৫ kHz / ১৯০ মিটার
  • আপনি ভয়েস অফ আমেরিকা’র ওয়েবসাইটেও অনুষ্ঠান শুনতে পারবেন।- voabangla.com
  • এছাড়া ফেসবুক পেজেও লাইভ অনুষ্ঠান শুনতে পারবেন – voabangla ( করোনা পরিস্থিতির কারনে সাময়িক বন্ধ আছে)

ভয়েস অফ আমেরিকা’র বাংলা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকানা –

Bangladesh: VOA Bangla, Post Box No- 323, Dhaka-1000, ই-মেইলঃ [email protected]

রেডিও

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

অনন্য ভাষা

বাংলা ছাড়া যেসব ভাষায় খবর ও অনুষ্ঠান প্রকাশ ভয়েস অফ আমেরিকা।

সেগুলো হল – আফান অরোমো *, আলবেনিয়ান * +, আমহারিক *, আর্মেনিয়ান +, আজারবাইজানীয় +, বাম্বারা *, বাংলা * +, বসনিয়ান +, বার্মিজ।

এছাড়া, দারি ফার্সি * +, ফিলিপিনো *, ফরাসি *+, জর্জিয়ান *, হাইতিয়ান ক্রিওল *, হাউসা *, ইন্দোনেশিয়ান *+, খেমার * + ।

* +, ক্যান্টনিজ * +, ম্যান্ডারিন * + কিনারওয়ান্ডা*, কিরুন্দি*, কোরিয়ান*, কুর্দি*, লাও*, লিঙ্গালা*, ম্যাসেডোনিয়া+, নেদেবেলে*, পশতু+,।;

পার্সিয়ান *+, পর্তুগিজ*, রোহিঙ্গা*, রাশিয়ান+, সাঙ্গো*, সার্বিয়ান+, শোনা*, সোমালি*, স্প্যানিশ*+, সোয়াহিলি*।

থাই*, তিব্বতি*+, টাইগ্রিনা*, তুর্কি +, ইউক্রেনীয়+, উর্দু *+, উজবেক *+, ভিয়েতনামী *+, উওলোফ, ইংরেজি * +।

পুনশ্চ – রেডিও প্রোগ্রামগুলি একটি তারকাচিহ্নের সাথে চিহ্নিত করা হয়; টিভি প্রোগ্রামগুলি আরও একটি + চিহ্ন সহ।

ভয়েস অব আমেরিকার রোহিঙ্গা ভাষার অনুষ্ঠান ‘লাইফলাইন’

‘লাইফলাইন’ নামে রোহিঙ্গা ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ)। রোহিঙ্গা ভাষায় খবর ও চলতি ঘটনাবলি নিয়ে এই অনুষ্ঠান।

২৯ জুলাই ২০১৯ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে আন্তর্জাতিক বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এই সম্প্রচার শুরু হয়।

সপ্তাহে পাঁচ দিন, সোম থেকে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ৩০ মিনিট রোহিঙ্গা ভাষায় খবর ও চলতি ঘটনাবলি নিয়ে রেডিওর মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবে।

প্রচার সময় ও ফ্রিকোয়েন্সি

  • সপ্তাহে সোম থেকে শুক্রবার (শনি ও রবিবার বাদ)।
  • বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, ভারতীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
  • শর্টওয়েভ ৯৩১০, ১১৫৭০ এবং ১২০৩০ Khz এ। একই দিনে ১৫৭৫ kHz মেগাওয়াটে পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংস্থাটির কার্যক্রম বর্ধিতকরণের অংশ হিসেবে ‘লাইফলাইন’ নামে নতুন একটি রোহিঙ্গা ভাষার অনুষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা।

বন্ধ হচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বেতার সম্প্রচার

দীর্ঘ ৬৩ বছরের পথচলা শেষে (২০২১ সালের ১৭ জুলাই) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) বাংলা বিভাগের বেতার সম্প্রচার কার্যক্রম।

১৭ জুলাইয়ের পর আর বেতারে ভিওএর বাংলা সম্প্রচার শোনা যাবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এই আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেতারে শ্রোতাগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শক-অনুসারীর সংখ্যা বাড়ায় তারা বাংলা এফএম ও শর্টওয়েভে বেতার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একইসঙ্গে তারা টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা দর্শক-শ্রোতাগোষ্ঠীর জন্য নতুন অনুষ্ঠান ও আধেয় প্রচার বাড়াবে।

তবে এই পরিবর্তনের কারণে ‘লাইফলাইন’ নামের বেতার অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে না।

বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য রোহিঙ্গা ভাষায় প্রচারিত ৩০ মিনিটের এই বেতার অনুষ্ঠান চালু থাকবে, যা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে।

মতামত দিন