চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: চট্টগ্রামের বনেদী ‘সওদাগরী পাড়া’

Posted by

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজার, দেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী- এমন প্রবাদ যেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেলায় সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজার

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বনেদী ‘সওদাগরী পাড়া’ খ্যাত; দেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার।

বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী- এমন প্রবাদ যেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এর বেলায় সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য।

এখানে বিভিন্ন পণ্যের সওদা করে এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, তারকা ব্যবসায়ী হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য কর্ণফুলী নদী থেকে প্রবাহিত চাক্তাই, রাজাখালী ও বদরশাহ এ তিনটি খালের উপকণ্ঠে বৃটিশ আমলে গড়ে উঠেছে হরেক রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ।

এ বাজারের গোড়াপত্তন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও চট্টগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নদী ও খালের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের বাড়তি সুবিধা নিয়ে ১৩’শতকে সুলতানী আমলে তৎকালীন চাটগাঁ’র শুলকবহর ও চকবাজার এলাকায় পাইকারী ব্যবসা শুরু করেছিলেন কয়েকজন বনেদি ব্যবসায়ী।

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর কাছাকাছি হওয়ায় দ্রুত এ ব্যবসা বিস্তার লাভ করে।

ক্রমে সেটা আরও ছড়িয়ে পড়তে পড়তে খাতুনগঞ্জে এসে থিতু হয়।

দু’শত বর্ষের বেশি পুরোনো খাতুনগঞ্জে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেচাকেনা হয়।

শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের ৬ দিন লেনদেন হয়ে থাকে এখানে।

ভোজ্যতেল, চিনি, গম, ডাল, মসলা ও কাঁচা পণ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক, ঢেউটিন, রংসহ নানা ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয় খাতুনগঞ্জে। আমদানি করা চালও বিক্রি হয় এ বাজারে।

এখানকার প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পণ্য সারা দেশে যায়।

তবে চালের মূল আড়ত খাতুনগঞ্জের পাশে চাক্তাই বাণিজ্যকেন্দ্রে।

এছাড়া, খাতুনগঞ্জ ও আশপাশের বাণিজ্যকেন্দ্র মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

খাতুনগঞ্জে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

এস আলম, টি কে গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপসহ বহু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানই আছে এ তালিকায়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পণ্য কিনে নেন বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামকে ছাপিয়ে রাজধানী ঢাকার অনেক শীর্ষস্থানীয় বণিক-শিল্পপতি ও প্রধান প্রধান ব্যবসায়ী গ্রুপের কর্ণধারদের মূল ব্যবসা-বাণিজ্যিক অফিস অথবা একেকটি করে লিয়াজোঁ অফিস রয়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ কিংবা আছদগঞ্জে।

নামকরণের ইতিহাস

ব্রিটিশ আমলে ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য স্মপ্রসারিত হয়ে গড়ে উঠেছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আছদগঞ্জ কোরবানীগঞ্জ সওদাগরী বাণিজ্যপাড়া।

ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সাব-জজ হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয় স্ত্রী মোছাম্মৎ খাতুন বিবির নামানুসারে এখানকার সওদাগরী ব্যবসায়িক পাড়া খাতুনগঞ্জ গড়ে ওঠে।

তবে পুরনো সওদাগরী পাড়া চাক্তাই গড়ে ওঠে আরও আগে।

সম্রাট বাবরের শাসনামলে পালতোলা জাহাজ নিয়ে আরব, পারস্য ও মধ্য-এশিয়ার সওদাগররা চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপদ পোতাশ্রয় দিয়ে আন্তঃদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

এসময়ে তুর্কী বণিকরা চট্টগ্রামের প্রতি অধিকতর আকৃষ্ট হন।

তাদের অন্যতম ছিলেন প্রাচীন তুরস্কের অতিচৌকস, বনেদী ও ‘জাত’ ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত ‘চুগতাই’ সওদাগরগণ।

তাদেরই নাম ও খ্যাতির স্বর্ণযুগের সাথে জড়িয়ে চট্টগ্রামের এ ব্যবসায়-বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ‘চাক্তাই’ হিসেবে পরিচিতি ও সুখ্যাতি লাভ করে।

শিল্পপতিদের আঁতুড়ঘর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

কালক্রমে বিশ্বের বৃহৎ নদ-নদীর তীরে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক নগরীর মতো এ কর্ণফুলীর তীরে খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, চাক্তাই, বক্সির হাট, টেরিবাজার নিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে ওঠে।

নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজারে রূপ নেয়।

এ বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকাটি বাংলাদেশের অনেক সওদাগর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পপতির সূতিকাগার।

এখানকার ব্যবসায়ীরা দুভাগে বিভক্ত ছিলেন। বাঙালি ও অবাঙালি। বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই ছিলেন চট্টগ্রামের লোক।

তারা পরিচিত ছিলেন চাটগাঁইয়া হিসেবে।

অবাঙালিরা ছিলেন বোম্বাই ও গুজরাটের বাসিন্দা। অবাঙালি ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে সব সময়ই দাপুটে ছিলেন।

কারণ তাদের পুঁজি তুলনামূলক ভালো ছিল। পণ্য আমদানির অনুমতি ছিল। বাঙালি ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির অনুমতি কদাচিৎ পেতেন।

অবাঙালি ব্যবসায়ীদের অনেকে খাতুনগঞ্জের পাশাপাশি করাচিতেও ব্যবসা করতেন।

ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানি করা পণ্য পাইকারিতে কিনে নিতেন।

অনেক বাঙালি ব্যবসায়ী অবাঙালিদের পণ্য আমদানি অনুমতিপত্র কাজে লাগাতেন।

স্বাধীনতা উত্তরকালেই দেশের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় খাতুনগঞ্জ। স্বাধীনতার পর ট্রাকে পণ্য পরিবহন শুরু হয়।

বর্তমানে সিংহভাগ পণ্যই ট্রাকযোগে আনা-নেওয়া হয়। সমুদ্রপথেও আমদানি করা পণ্য এখানে গুদামজাত করা হয়।

আশির দশক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার বাণিজ্য জোরদার হতে শুরু করে।

এ সময় খাতুনগঞ্জে ব্যাপক পুঁজির আগমন ঘটে। পণ্য আমদানির সঙ্গে ডিও বেচাকেনা চলে। কাগজভিত্তিক লেনদেনে বিশ্বাস আর আস্থা ছিল ব্যবসায়ীদের পুঁজি।

অস্তিত্ব সঙ্কটে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

চট্টগ্রামকে বলা হতো ‘গেটওয়ে অব দি ইস্ট’। এখানে খ্রিষ্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে আরব বণিকরা আসেন ব্যবসার জন্য।

তুর্কি ও পর্তুগিজ বণিকরাও আসেন। তখন থেকেই খাতুনগঞ্জের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

কালক্রমে আজ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ অনাদরে অবহেলায় সামগ্রিকভাবে গভীর অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।

বিশ্বাসনির্ভর ব্যবসায় অব্যাহত প্রতারণা, ব্যবসায়ীদের অবহেলা আর আচরণে কয়েক শত বছর পার করা এই বাজার এখন হতশ্রী রূপ নিয়েছে।

দু’শ বছরের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ধারক সুবিশাল এই ব্যবসায়িক এলাকাটির সমৃদ্ধ অতীতের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলো পদে পদে মিলিয়ে দেখছেন। স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এর বনেদি ব্যবসায়ীদের উত্তরসূরিরা তাদের পূর্বপুরুষের এ ব্যবসাকেন্দ্রের হতশ্রী অবস্থা দেখে মনে কষ্ট পান।

দিনের পর দিন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়িক পরিবেশের অধঃপতন দেখে তাদের অন্তরে জন্ম নেয় দ্রোহ ।

বর্তমানে নানামুখী সঙ্কট ঘিরে ধরেছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জকে। এর মধ্যে প্রধান সঙ্কট বর্ষাজুড়ে ও আগে-পরে বৃষ্টি আর জোয়ারে জলাবদ্ধতা।

এর পাশাপাশি রয়েছে ‘ব্রিফকেস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত অসৎ তথাকথিত ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বৃদ্ধি, ঠগবাজি, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের বিভিন্ন ঘটনায় সার্বিকভাবে আস্থার সঙ্কট। আছে নীরব চাঁদাবাজি সন্ত্রাসও।

ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, অলিগলি, নালা-নর্দমাসহ অবকাঠামো সুবিধা অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে।

বিস্তীর্ণ এই সওদাগরী পাড়ার মূল প্রাণপ্রবাহ ছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান খাল চাক্তাই খাল।

একে নির্বিচারে দখল-দূষণ ও ভরাটের পরিণামে দীর্ঘদিন ধরে ‘চট্টগ্রামের বারমাইস্যা দুঃখ ও আপদ’ হয়ে আছে সেই চাক্তাই খাল।

অথচ একদা চাক্তাই খাল দিয়ে মালামাল বোঝাই নৌকার বহর ভোর থেকে রাত অবধি ছুটে যেতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে।

  • চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এ বিশ্বাস অচল

কথিত আছে, আদিকাল থেকে বিশ্বের হরেক ব্যবসায়ী, জলদস্যু কিংবা বাণিজ্যতরীবাহী নাবিকের দল চট্টগ্রামের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যের স্বাদ আস্বাদন করে এসেছে।

ভিনদেশী বাণিজ্যগোষ্ঠী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের পদচারণায় একসময় খাতুনগঞ্জ একটি বাণিজ্য তীর্থে পরিণত হয়েছিল।

আছদগঞ্জ, রামজয় মহাজন লেন, চাক্তাইসহ একাধিক প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের হরেক রকমের বাণিজ্য বৈচিত্র্য খাতুনগঞ্জকে রূপ দিয়েছে অনন্যতায়।

সেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এ বিশ্বাস বাবু মরে গেছেন!

চট্টগ্রামের ‘সওদাগরী বাণিজ্য পাড়া’ খ্যাত চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের কাছে এই কথাটা মুখে মুখে প্রচলিত।

আগে ব্যবসায়ীদের মুখের কথায় ও মামুলি একটি চিরকুট বা সিল্পের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন শত কোটি টাকার লেনদেন হতো অনায়াসেই। এখন এসবে কাজ হয় না।

ব্যাংকের চেকেও ভরসা নড়বড়ে। বর্তমানে এক কথায় চাক্তাই খাতুনগঞ্জে বিশ্বাস অচল।

প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গ করে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে গাঁ ঢাকা দেয়ার একের পর এক ঘটনায় দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে।

এই অবিশ্বাস এখন আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

খাতুনগঞ্জে সর্বশেষ বড় প্রতারণার ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের নভেম্বরে। ইয়াছির গ্রুপের কর্ণধার মোজাহের আলম ২৯ জন ব্যবসায়ীর ১৫০ কোটি টাকা মেরে বিদেশে পালিয়ে যান।

প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকেরও পাওনা ছিল ৫২৫ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১১ সালে চৌধুরী ব্রাদার্স ও চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ ভাই মিলে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা মেরে পালিয়ে যান।

এসব প্রতারণার ঘটনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে খাতুনগঞ্জের ব্যবসার পরিবেশকে। এ কারণে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা।

চেনাজানা নেই এমন কারও সঙ্গে আর লেনদেন করছেন না বর্তমান ব্যবসায়ীরা।

ফলে নতুন করে কেউ আর এ বাজারে যুক্ত হতে পারছেন না। এহেন গভীর সন্দেহ-সংশয় ও অবিশ্বাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে।

  • ব্যবসা নয়, পানিনিষ্কাশনই বড় কাজ

বৃষ্টি হলেই ডুবে চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার। কোন কোন সময় বৃষ্টির সঙ্গে অমাবস্যাজনিত জোয়ার ও কাপ্তাই হ্রদের পানি যোগ হয়ে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করে।

ব্যবসায়ীরাদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরই বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে এখানকার বিভিন্ন গুদাম তলিয়ে যায়। এতে তাদের কয়েক শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

অমাবস্যা-পূর্ণিমায় টানা কয়েক দিন ধরে জোয়ারের তাণ্ডব চলছে।

এখনও নৌকা-সাম্পানে যায়  মালামাল 

এখনও নৌকা-সাম্পানে যায়  মালামাল ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও মাঝি-মাল্লাদের হাঁক-ডাকে এখনও সরগরম থাকে চাক্তাই খালের দুই পাড়। একসময় এখানে ছিল রমরমা অবস্থা।

নৌকা-সাম্পান আর ট্রলারে অধিকাংশ পণ্য বোঝাই করে দিতো কিংবা খালাস করতো শ্রমিকরা। ২০০০ সাল থেকে সড়কপথেই বেশি পণ্য পরিবহন হয়।

মাঝিরা জানিয়েছেন, নৌকা-সাম্পানে মালামাল বোঝাই করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বোয়ালখালীতে পৌঁছানো হয়। কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের সময় এসব নৌকা-সাম্পান গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

তবে চাক্তাই খাল ভরাট হওয়ায় নৌ চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। একসময় পণ্য যেত চাঁদপুর ও খুলনা পর্যন্ত। এখন সেটা কেবলই স্মৃতি।

খালের চারপাশ দখল এবং ময়লা-আবর্জনার ভাগার ও দূষণ-দখলের কবলে পড়ে খালটি নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় কোনো মতে অতীতের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।

শুটকির আড়ত

শুটকির আড়তসারাদেশে উৎপাদিত শুঁটকির পুরোটাই দেশের একমাত্র শুঁটকির আড়ত চট্টগ্রামের আছদগঞ্জে আসে। আছদগঞ্জ থেকে সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে যায়।

আছদগঞ্জে সপ্তাহের শনিবার বড় বাজার বসে। শনিবার একদিনে এক হাজার টনের মতো শুঁটকি বিক্রি হয়।

সপ্তাহের অন্যদিনগুলোসহ মিলিয়ে সপ্তাহে দুই হাজার টন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।

বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। টাকার হিসেবে দেশে দুই হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে।

একসময় শুধুমাত্র বাংলাদেশে শুঁটকি হতো। এখন চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু দেশে চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ শুঁটকি উৎপাদন হয়।

প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে মিয়ানমার থেকে, ৩০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ আসে পাকিস্তান, ওমান ও দুবাই থেকে।

ধ্যপ্রাচ্য থেকে শুঁটকি আসলেও দুবাইতে শুধুমাত্র বাংলাদেশি শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। এতে আমাদের দেশে উৎপাদিত ভালোমানের কিছু শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি হয়।

অবহেলিত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

খাতুনগঞ্জের সেই স্বর্ণযুগ এখন আর অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশের ‘ওয়াল স্ট্রিট’ খ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক ঐতিহ্য হারাচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের ফিকে হয়ে আশা জৌলুস, পরিকল্পনাহীন নাগরিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এখানকার অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আধুনিক সুসজ্জিত ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছেন।

জানা যায়, চট্টগ্রামে আমদানি পণ্য মজুদ রাখার মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।

যে পরিমাণ পণ্যসামগ্রী সমুদ্রপথে আমদানি হয়, তা রাখার মতো গুদাম নেই চট্টগ্রামে।

বন্ধ থাকা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গুদামে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের পণ্য।

তাতেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে নদীপথে ছোট ছোট দেশীয় জাহাজে (কোস্টার) করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে মজুদ করা হচ্ছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের গুদামে।

এর আগে এরশাদের আমলে ঢাকার কমলাপুরে আইসিডি স্থাপনের কারণে কনটেইনারে করে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী সরাসরি সেখানে চলে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নদী, সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ অনেক সহজ। এ কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা এখন ঢাকামুখী হয়ে পড়েছে।

তথ্যসূত্র : পত্রিকা, আর্টিকেল, ওয়েব, ব্লগ থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

মতামত দিন