জন্ম নিবন্ধন সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায় জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে ।
জন্ম নিবন্ধন একটা মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র এইভাবে স্বীকার করছে যে, হ্যাঁ, তুমি শিশু রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে এসেছো।
দেশের নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ই।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় ব্যক্তির নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক জন্ম সনদ প্রদান করা।
জন্ম নিবন্ধন-এ নতুন শর্ত
যাদের জন্ম ২০০১ সালের পর তাদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েই যে কারও জন্ম নিবন্ধন করা যেত।
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর বিপাকে পড়েন অনেক বাবা-মা। এখন আগে তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে হয়, তারপরে হয় সন্তানের জন্ম সনদ।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- ই–পাসপোর্ট সহজে যেভাবে পাবেন
- অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করবেন যেভাবে
- জেনে নিন কপিরাইট নিবন্ধন করার নিয়মকানুন: ঘরে বসেই ই-কপিরাইট!
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, নতুন নিয়মে যখন ২০০১ সাল ও তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয় তাতে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিতে হয়।
সে কারণে বর্তমানে কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য বা-বাবার জন্মনিবন্ধন থাকাটা আবশ্যক।
বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধন যদি বাংলায় হয় তাহলে সন্তান বাংলায় একটা জন্ম নিবন্ধন পাবে। আর দুটোই ইংরেজিতে হলে জন্মনিবন্ধন পাবে ইংরেজিতে।
কিন্তু যদি দুজনেরটা আলাদা হয় তাহলে আবেদনই করতে পারবে না। দুজনেরটা এক ভাষায় করে নিতে হবে। এটা করলে সন্তান জন্ম নিবন্ধন নিতে পারবে।
নতুন নির্দেশনা, একটি প্রমাণপত্র থাকলেই জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
জন্মনিবন্ধন নিতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। তবে, আশার খবর হলো রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জন্মনিবন্ধনের ঝামেলা কমাতে ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ।
এখন থেকে জন্মতারিখের যে কোনো একটি প্রমাণপত্র থাকলেই জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
যেমন- সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে আগে মা-বাবার জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে হতো। ওই সনদ নিতে গিয়ে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রমাণপত্রসহ সংযুক্ত করতে হতো আরও অনেক কিছু।
বেশি বিপাকে পড়ত মা-বাবা বিচ্ছেদ হওয়া সন্তানরা।
এসব প্রমাণপত্র জোগাড় করতে না পারায় তাদের জন্মনিবন্ধন করাটা কঠিন হয়ে উঠেছিল।
অবশ্য রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারেক হিকমত বলেন, এখন পদ্ধতিটা এমন করা হয়েছে, যে কেউ চাইলে সব তথ্য জন্মনিবন্ধনের সময় দিয়ে রাখতে পারবে। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুবিধা হবে।
কেউ পুরোটা দিতে না চাইলে জন্মের একটি মাত্র প্রমাণপত্র যেমন টিকার কাগজ বা হাসপাতালের ছাড়পত্র দিয়েও সন্তানের জন্মসনদ নিতে পারবেন বলে জানান মির্জা তারেক হিকমত।
বয়স ভেদে জন্ম নিবন্ধনের জন্য যেসব তথ্য ও নথি দরকার
শুন্য থেকে ৪৫ দিন বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য
- > টিকার কার্ড
- > পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র
- > বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারী ট্যাক্সের রশিদের হাল সনদ
- > আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর
- > ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৪৬ দিন থেক ৫ বছর বয়সীদের জন্মনিবন্ধন নিতে
- > টিকার কার্ড/স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যয়নপত্র স্বাক্ষর ও সিলসহ প্যাডে হতে হবে
- > পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র
- > প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নসহ বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নের সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে
- > বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারী ট্যাক্সের রশিদের হাল সনদ
- > আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর
- > ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বয়স ৫ বছরের বেশি হলে
- > শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি) শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র না থাকলে সরকারি হাসপাতালের এমবিবিএস ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিলসহ প্রত্যয়ন সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরমের ৭ এর ১ নং কলামের স্বাক্ষর ও সিল বাধ্যতামূলক।
- > যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক
- > যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির আগে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক
- > যদি জন্ম ২০০১ সালের আগে হয় সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা মৃত হলে মৃত্যু সনদ বাধ্যতামূলক
- > যাদের জন্ম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের পিতা-মাতা মৃত হলে প্রথমে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন গ্রহণ করার পর অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করতে হবে। উভয় সনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
- > বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারী ট্যাক্সের রশিদের হাল সন
- > আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর
- > ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- > আবেদনের সঙ্গে কাগজপত্র সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য/নারী সদস্যদের স্বাক্ষরসহ সিল বাধ্যতামূলক।
শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করার নির্দেশ
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন অনলাইনে করার নির্দেশনা দিয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো বাস্তবায়নাধীন এক প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের যষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর ডেটাবেইস প্রস্তুত ও ইউনিক আইডি দেওয়ার কাজ চলছে।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- অনলাইনে নিলাম আবেদন চট্টগ্রাম কাস্টমসে, ঘরে বসে অংশ নিন
- অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ হবে, বৈধতা যাচাই করবেন যেভাবে
- ই-টিআইএন, ঘরে বসে নিজেই বানিয়ে নিন
যেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন নম্বর অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হয়নি, সেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন নম্বর অনলাইনের মাধ্যমে করে ফরমে লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
কেননা, শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ নম্বর ও জন্ম তারিখ অনলাইনে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের ডেটাবেইসে যাচাই করার পর ইউআইডি দেওয়া হবে।
হাতে লেখা জন্ম সনদের নম্বর অনলাইনে ভেরিফাই করা যাবে না। ইউনিক আইডি দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো শিক্ষার্থীর জাল সনদ নম্বর ও জন্ম তারিখ যাচাই করা।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন
অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম প্রথমে বাংলায় (ইউনিকোড) ও পরবর্তীতে ইংরেজিতে পূরণের পর প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন।
সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন পত্রটি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে স্থানান্তিরত হয়ে যাবে, আবেদনকারীর আর কোন সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।
পরবর্তী ধাপে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে আবেদন পত্রের মুদ্রিত কপি পাবেন।
সনদের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত আবেদন পত্রে নির্দেশিত প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপিসহ নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করুন।
জন্ম নিবন্ধন ফি
সময়ের সাথে সাথে জন্মনিবন্ধন ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
- শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মাঝে নিবন্ধন করলে কোন ফি লাগে না।
- ৪৫ দিন থেকে ৫ বছরের মাঝে নিবন্ধন করলে ২৫ টাকা ফি লাগবে৷
- ৫ বছরের পর নিবন্ধন করলে ফি লাগবে ৫০ টাকা।
এছাড়া জন্মনিবন্ধন সংশোধন এর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন
জন্মনিবন্ধন সংশোধন প্রক্রিয়া একটু জটিল। সহজে করতে চাইলে ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারে চলে যান। বাকি কাজ তারাই করে দিবে।
আর অনলাইনে করতে চাইলে আপনার বাবা মায়ের জন্ম সনদ সংযুক্ত করতে হবে।
এরপর bdris.gov.bd এই সাইটে গিয়ে জন্মনিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে আবেদন করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই
কেউ ভুয়া জন্ম সনদ ব্যবহার করছে কিনা সহজেই যাচাই করা যায়। জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করা জন্মনিবন্ধন যাচাই করার মতই হুবহু একই যা আমরা উপরে দেখিয়েছি।
BDIRS এর ওয়েবসাইট থেকে জন্মনিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করতে পারবেন।