সফল হওয়ার উপায় কিংবা সাফল্যের সূত্র!

Posted by

সফল হওয়ার উপায় - এখনই সময়সফল হওয়ার উপায়: সাফল্য যেন সোনার হরিণ কিংবা রাতের শেষ রেলগাড়িটা। সবাই ছুটছে তার দিকে। সবার মনে প্রশ্ন, হরিণের দেখা মিলবে কবে কিংবা রেলগাড়িটা কি ধরতে পারব?

সফলতা সবার কাছেই কাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ। কিন্তু সাফল্য বা সফল হওয়া মানেই বা কী? অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সম্মান, পরিচিতি বা কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি ইত্যাদি অর্জনই কি সাফল্য।

নাকি এর মানে আরও অন্য কিছু?

আসলে সফলতা শব্দটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যেই খুব ব্যক্তিগত এবং একেকজনের কাছে একেক রকম।

তবে বলা যায়, প্রতিটি মানুষই যে অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম নেয় সে সম্ভবনার বিকাশ, জীবনযাপনে এর প্রয়োগ এবং পরিতৃপ্তিবোধ থাকা সফল মানুষের জীবনযাপনের মাপকাঠি।

সফল হওয়ার উপায় কিংবা সাফল্যের সূত্র

ব্যক্তির জীবন ও নিজেকে দেখার ধরন, চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা, দূরদর্শিতা, আত্মবিশ্বাস, চিন্তা–আবেগের ধরন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে মানুষের ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়।

মেধার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বের ধরন কঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যক্তির চিন্তার ধরন, ইতিবাচক জীবনবোধ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিজের ও কাজের প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি নানা কিছুই তাকে অনেকের মধ্যে অনন্য করে তোলে।

অনন্য এই বৈশিষ্ট্যই তৈরি করে সফলতার সূত্র।

লক্ষ্য নির্ধারণ: সফলতার সহজসরল মানে হলো লক্ষ্য পূরণ হওয়া।

সুতরাং জীবনে আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান অথবা অন্যরা আপনাকে কীভাবে মনে রাখবে প্রথমে সেটা বের করুন।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

যে কাজটি আপনি ভালোবাসেন না বা আনন্দ পান না, যে কাজে আপনার বিশ্বাস নেই, সে কাজ দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে কিন্তু সে কাজে সফলতার দেখা পাওয়া কঠিন।

সামাজিক দক্ষতা বাড়ান: সামাজিক দক্ষতা মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ায় এবং শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

সফলতার কঠিন পথটি কিছুটা সহজ হয়, যদি সামাজিক যোগাযোগ বা গ্রহণযোগ্যতা ভালো থাকে।

সামাজিক নেটওয়ার্ক একধরনের নিরাপত্তাবোধ দেয় তাই না, আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সমস্যা মোকাবিলায় সাহস জোগায়।

অন্যকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন: নিজের কোনো ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের ওপর চাপানো সহজ হলেও এটা আপনার জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না।

জীবনে ভালোমন্দ যেকোনো ঘটনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার মনোভাব সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত।

মানসিক প্রস্তুতি: মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, যা আমাদের যেকোনো বিষয় সহজভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে বা অতিরিক্ত মুষড়ে পড়া থেকে বাধা দেয়।

অনুকূল অবস্থা যেকোনো সময়ে প্রতিকূল হতে পারে সেটা মনে রাখা জরুরি।

মাঝেমধ্যে থামুন, সতর্কীকরণ সংকেতকে গুরুত্ব দিন: সাফল্যের পদযাত্রায় নানা কিছুর হাতছানির ফাঁদ আপনার জীবনে আসবে। এসব ফাঁদ অনেক সময় আপনাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে।

মনে রাখবেন জীবন নানাভাবেই আপনাকে আপনার কাজের ফিডব্যাক দেবে। সুতরাং ব্যস্ততার মাঝে মাঝে থামুন এবং চারপাশে মনোযোগ দিন।

ব্যবসার অবনতি, গ্রেড কমে যাওয়া, সম্পর্কের অবনতি, শরীর–মন খারাপ লাগা, কাজকর্মে জট পাকিয়ে যাওয়া সবকিছুই জীবনের একরকম ‘সতর্কীকরণ সংকেত’ যা আপনাকে এসব বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে বলে।

ব্যর্থতাকে সহজে গ্রহণ করুন, লেগে থাকুন: আপনার জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে যাওয়ার পথ সব সময় আপনার অনুকূলে থাকবে না।

মাঝে মাঝে আপনি হোঁচট খাবেন অথবা পড়ে যাবেন বা ব্যর্থ হবেন।

কোনো বিষয়ে সফলতার স্বাদ পেতে হলে শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও লেগে থাকুন।

এসব বাধাকে স্বাভাবিকভাবে ধরে নিয়ে যে যত ক্রমাগত নিজের কাজ করে যাবে, কঙ্ক্ষিত ফলাফলের দিকে সে তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।

স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের সঙ্গে কিন্তু আমাদের অভ্যাসগুলো জড়িত।

সাফল্যের জন্য শরীরের যত্ন নিতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ে জোর আনতে হবে।

সৃজনশীলতার বিকাশে নজর দিতে হবে। নেতিবাচক মানুষ ও পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।

সবকিছুই আজকের বিষয়: ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত বলে তেমন কিছু নেই, বিষয়টি আপেক্ষিক।

সাফল্যের জন্য আপনাকে আজ কাজ করতে হবে। আজ যদি কাজ ভালো করেন তাহলে কিন্তু দারুণ একটি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

হ্যাঁ-না বলুন ভেবেচিন্তে: সফল ব্যক্তিরা হ্যাঁ-না বলেন ভেবেচিন্তে। বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সৃজনশীল যেকোনো সুযোগ মিললে হ্যাঁ বলুন।

আনন্দ কিংবা মনন বিকাশ হতে পারে এমন কাজকে সব সময়ই হ্যাঁ বলা শিখুন।

সরলভাবে ভাবুন, শিখুন: সবকিছুকে সাধারণভাবে ভাবতে শিখুন। শিশুরা সবকিছু সরলভাবে ভাবার চেষ্টা করে বলে তারা জীবনের সরলতা খুঁজে পায়।

পড়তে হবে অনেক: মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সবকিছু জানি না। জানার জন্য বই পড়তে হবে। ফিকশন, নন-ফিকশন সব ধরনের বই পড়তে হবে।

বহুমাত্রিক সাফল্যের জন্য চেষ্টা করুন: মার্কিন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট তরুণদের এক জায়গায় বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দেন না।

তিনি অনেক জায়গায় বিনিয়োগের পরামর্শ দেন, যেন একটি বিনিয়োগে ব্যর্থ হলেও অন্য জায়গায় সামনে এগোনোর সুযোগ থাকে।

ভয় বনাম জড়তা: আপনি সবার সামনে কথা বলতে ভয় পান। আবার যা বলতে চান তা ঠিকমতো বলতে পারেন না।

সফল ব্যক্তিরা নিজের ভয়কে জয় করতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভয় কাটিয়ে জড়তা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

শেষ কথা

লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে যে সফলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটা জীবনখেলার একটা অংশমাত্র।

এ খেলায় সব সময় আপনার পায়ে বল থাকবে বা আপনি সামনে যেতে থাকবেন, তা না–ও হতে পারে। খেলায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেমন মাঝে মাঝে ব্যাকফুটে যেতে হয়, মাঝে মাঝে অন্যের পায়ে বল দিয়ে দিতে হয়, এখানেও তাই।

মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন- 

সুতরাং অভীষ্ট লক্ষ্যে যেতে মাঝে মাঝে প্রয়োজনে ব্যাকফুটে যান। অন্যকে সুযোগ করে দিন। প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বিরতি নিন। পর্যবেক্ষণ করুন, স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল পরিবর্তন করুন।