স্কলারশিপ নিয়ে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ

Posted by

মুসলিম বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় মিসরের আল-আজহারের ইনস্টিটিউটগুলোয় স্কলারশিপ নিয়ে অনার্স-মাস্টার্সের ভর্তির সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

আবেদন শুরু হয়েছে গত ২৪ আগস্ট। আবেদনের শেষ সময় ১৩ সেপ্টেম্বর।

বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট করার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হবে। যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে।

আরবি ভাষায় দক্ষ শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তির জন্য প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বৃত্তিসংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া রয়েছে।

http://scholar.banbeis.gov.bd/egypt/ এ আবেদন করা যাবে। আবেদনের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে।

উল্লেখ্য, আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম সেরা শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বিবেচ্য।

ফাতেমি খিলাফতের সময় ৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন ও ইসলামি আইন শিক্ষার জন্য এই শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

বর্তমানে সেক্যুলার বিষয়াদিও কারিকুলামে সন্নিবেশিত আছে।

বলাই বাহুল্য, প্রতিবছর এই স্কলারশিপের কিছু না কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা হয়।  এই কারণে নির্দিষ্ট করে কোনও কাগজপত্রের কথা বলা হচ্ছে না।

তবে পূর্ব-অভিজ্ঞতা বলছে, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেতে দাখিল ও আলিমের সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, আলিমের প্রশংসাপত্র, জন্ম সনদ, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, পুলিশ-ক্লিয়ারেন্স, ছবি ইত্যাদি লাগে।

আবেদন শেষ হওয়ার পরে যাদের বাছাই করা হয়, তাদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরপর সুযোগ পাওয়া ১০ জন মেধাবী ছাত্রের সমস্ত কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়।

সেখান থেকে তারা মিশর অ্যাম্বসিতে পাঠিয়ে দেয়। মিশর অ্যাম্বসি আবার সকল কাগজপত্র মিশরের বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করে।

তারপরে মিশরের যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে যখন মিশরের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় থেকে মুয়াফাকা আমানিয়া চলে আসে বাংলাদেশের মিশর অ্যাম্বসিতে তখন ওই ১০ জন ছাত্রকে ভিসা নেওয়ার জন্য ডাকা হয়।

স্কলারশিপ ছাড়া যেভাবে নিজ খরচে আল আজহারে ভর্তি হওয়া যাবে

স্কলারশিপে আসার পাশাপাশি আল-আযহার ইউনিভার্সিটি’তে নিজ খরচেও পড়ালেখা করার সুযোগ আছে। সেটা যেভাবে হয়ে থাকে তাহলো– বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এখানে চলে আসার পরে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যাবে।

আর ১-২ বছরের মতো নিজ খরচে বাইরে থেকে স্কলারশিপের আবেদন করলে সাধারণত বেশিরভাগ ছাত্রের আবেদন কবুল করা হয়। সেক্ষেত্রে তারা পরবর্তীতে স্কলারশিপ-এর সকল সুবিধা পাবে।

আর জেনে রাখা দরকার যে, মিশরে আল-আযহার ইউনিভার্সিটি-এর স্কলারশিপ হলো সবচেয়ে দামি স্কলারশিপ।

আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি 

মুসলিম বিশ্বের প্রাচীন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও টিকে আছে তার মধ্যে আল আজহার অন্যতম। এটি শুধু মুসলিম বিশ্বের নয়; বরং গোটা পৃথিবীরও অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।

আল আজহার মসজিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তিত করা হয় ৯৭৫ সালে।

শায়খ সাইয়েদ আল ফারিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শায়খ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

সূচনাকালে আল আজহারে বিভাগ ছিলো ৫টি। তাহলো, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব, আইন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইসলামিক দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা।

আধুনিক আল আজহারের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬১ সালে।

মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের আল আজহারের হাজার বছরের অবকাঠামো ও ঐতিহ্য ভেঙে তাকে একটি সেকুল্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন।

তিনি আধুনিক অনেকগুলো বিভাগ ও অনুষদ যুক্ত করেন। যেমন– ব্যবসায় অনুষদ, অর্থনৈতিক অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ও কৃষি অনুষদ ইত্যাদি।

বর্তমানে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলো তিনটি ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে।

তাহলো– ইসলামিক ও আরবি, বিজ্ঞান ও মানবিক। প্রত্যেক ইউনিটে রয়েছে একাধিক অনুষদ ও বিভাগ।

আল আজহারে মোট ৮৭টি অনুষদ রয়েছে। যার ৪০টি মেয়েদের জন্য এবং ৪৭টি ছেলেদের জন্য।

বর্তমানে আল আজহারের প্রায় ১৫১৫৫ শ্রেণিকক্ষে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষক পাঠদান করেন। তাদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করেন ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী।  শিক্ষার্থীদের ২০ ভাগ বিদেশি। বর্তমানে ১০২টি দেশের শিক্ষার্থী আল আজহারে লেখাপড়া করছে।

আরো ……

মতামত দিন