দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পরে সবসময়ের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো সামনে থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ পেশাজীবীই রয়েছেন সেল্ফ-কোয়ারেন্টিনে। কিন্তু সেল্ফ-কোয়ারেন্টিনে থেকে সংবাদ সংগ্রহের কোনো উপায় নেই। তাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই মাঠে কাজ করে যেতে হচ্ছে সংবাদকর্মীদের।
গত ৩ এপ্রিল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র একজন ক্যামেরাপার্সন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
একজন কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানে কর্মরতদের মধ্যে ৪৭ জনকে সেল্ফ-আইসোলেশনে থাকার জন্য বলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে প্রতিষ্ঠানটির চিফ এক্সিকিউটিভ এম শামসুর রহমান বলেন, “গত ২৬ মা্র্চ তিনি আমাদের জানান শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তিনি কাজে আসতে পারবেন না।
তখন থেকে আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ফোন করার আগ পর্যন্ত সেল্ফ-আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফলাফল পজিটিভ আসে।”
উল্লেখ্য, চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানী-ভিত্তিক অনেকগুলো গণমাধ্যম তাদের কর্মীদেরকে বাড়িতে বসে কাজ করার জন্য বলেছে। কিন্তু মাঠে থাকা সংবাদকর্মী অর্থাৎ রিপোর্টারদের সেই সুযোগ নেই খুব একটা। কারণ, যে কোনো তথ্যের জন্য তাদেরকেই ছুটে যেতে হয় সবার আগে।
প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের একজন কর্মী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, সংবাদ সংগ্রহের জন্য জনবহুল জায়গা এড়িয়ে চলার জন্য বলেছে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারপরেও থেকে যায় সংক্রমণের ঝুঁকি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ফটো সাংবাদিক আরও বলেন, “তথ্য বা ছবি সংগ্রহের সময় আমার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিই যে কোভিড-১৯ পজিটিভ নন, সেটা কে জানে?”
তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সামান্যই ভেবেছে রিপোর্টারদের ঝুঁকির কথা। কেউ কেউ যেন ভুলেই গেছেন বিষয়টি।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের স্টাফ রিপোর্টার রাশেদ আহমেদ বলেন, “তারা আমাদেরকে কেবল মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছেন। যা পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্টের (পিপিই) দু’টি উপাদান মাত্র।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও মাঠে কাজ করে যাওয়া শত শত রিপোর্টারের মধ্যে রাশেদও একজন। তিনি বলেন, ঝুঁকির মুখেও রিপোর্টারদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়, এটাই যেন বাস্তবতা।
“কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য দুর্বল সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমি শঙ্কিত।”
ইন্ডিপেন্ডেট টিভির এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান কর্মীদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।
“অফিস থেকে সরবরাহ করা মাস্ক ও গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।”
এমন পরিস্থিতিতেও সাংবাদিকদের জন্য যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
এ বিষয়ে ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, “গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো কি তাদের সংবাদকর্মীদের জন্য যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে?”
আরও পড়ুন – ‘কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, লকডাউন’ এসব মানে আসলে কী?
বেশিরভাগ গণমাধ্যমেরই কর্মীদের জন্য পিপিই নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “অনেকেই কর্মীদের আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহন সুবিধাটুকুও দিচ্ছেন না।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ডিআরইউ’র ১৫ সদস্য কোভিড-১৯ লক্ষ্মণের কথা জানিয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে তাদের রেজাল্ট নেগেটিভ।”
গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত কয়েকদিনে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
বুধবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬৪ বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইডিসিআর)। আর মারা গেছেন ১৭ জন।
সুত্র – ঢাকা ট্রিবিউন