বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, মূলত মাছ চাষের এই পদ্ধতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সহজলভ্য হয়ে উঠছে বাংলাদেশে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ; নতুন এক টেকসই এবং পরিবেশগত সবুজ প্রযুক্তি। প্রচলিত পদ্ধতির মাছ চাষের থেকে এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ আলাদা।
সম্ভাবনাময় মাছ চাষের এই পদ্ধতিটি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এসেছে বাংলাদেশে। খুব সহজেই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অল্প জায়গায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বিপুল পরিমান মাছ চাষ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের অনেক তরুণ মৎস্য চাষি নতুন এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
যা দেশে অতি দ্রুত মাছের উৎপাদনের বাড়ানোর পাশা-পাশি বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমাদের দেশে বায়োফ্লক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষ এখনও ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি।
তবে আশার কথা হল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা কতটা সঠিক হবে কিংবা চাষিরা কতটা লাভবান হবেন, তা নিয়ে এখন তারা গবেষণা করছেন সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট।
অন্যদিকে, ‘বায়োফ্লক’পদ্ধতিকে দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে গবেষণা করে যাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের একদল গবেষক।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থাপন করা হয়েছে বায়োফ্লক ল্যাব।
বায়োফ্লক কি?
বায়ো শব্দটি গ্রিক ‘বায়োস’ থেকে এসেছে— যার অর্থ জীবন। আর ফ্লক মানে আলতোভাবে লেগে থাকা কণার সমষ্টি।
বায়োফ্লক হল উপকারি ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমম্বয়ে তৈরি হওয়া পাতলা আস্তরণ; যা জলকে ফিল্টার করে।
এই প্রযুক্তি মূলত বর্জ্য পুষ্টির পুর্নব্যবহারযোগ্য নীতি। বায়োফ্লকে প্রচুর উপাদান থাকে, যা মাছের পুষ্টির যোগান দেয়।
মৎস্য গবেষকদের মতে, বায়োফ্লক এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জৈব বর্জ্যের পুষ্টি থেকে পুনঃব্যবহারযোগ্য খাবার তৈরি করা হয়।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা
- উচ্চ বায়োসিকিউরিটি
- অ্যামোনিয়া দূরীকরণ
- মাছের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ
- উত্তম প্রোটিনের উৎস:
- খাদ্য রূপান্তর হার (এফসিআর) হ্রাস করণ
- স্বল্প খরচ ও অধিক লাভ
- সহজ চাষ পদ্ধতি
- খুব কম পানি পরিবর্তন
- জমি এবং পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ
- পরিবেশবান্ধব একোয়াকালচার সিস্টেম
- রোগের প্রাদুর্ভাব দূরীকরণ
অর্থাৎ যে ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল তৈরি হয় তা পানিতে উৎপন্ন হওয়া নাইট্রোজেন গঠিত জৈব বর্জ্যকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হতে না দিয়ে নিজেদের বংশ বাড়ায় এবং এটিকেই ফ্লক বলে।
বায়োফ্লক প্রযুক্তি পানির গুনগতমান এবং ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করে মাছের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
জলীয় খামার ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোবায়াল প্রোটিন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে।
মূলত যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অল্প জায়গায় অনেক পরিমান মাছ চাষ করা হয়, সেই পদ্ধতিকেই বায়োফ্লক বলা হয়।
পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরীর কলাকৌশল
বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মৎস্য গবেষক ডঃ মো. খলিলুর রহমান জানান, এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পানিতে দুর্গন্ধ থাকে না এবং পানি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না।
তবে অতিরিক্ত ফ্লক তৈরি হলে বা অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে ৫-১০ শতাংশ পানি প্রতি সপ্তাহে বের করে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বায়োফ্লক পদ্ধতির ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা ঠিক নয়।
সাধারণভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি শতাংশে আড়াইশো গ্রাম লবণ দিতে বলি, যা মাছকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
এখানেও সেটি হতে পারে।
তবে, বায়োফ্লক প্রজেক্ট করার আগে পানির উৎস কী হবে এবং তার গুণাগুণ বা ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহানের মতে, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পানিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ের প্রস্তুত করা।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান
- ফটিকছড়ির চা বাগান: সৌন্দর্য্যের আধার, উৎপাদনেও সেরা!
- ভাসানচর: আমূল বদলে যাওয়া এক দ্বীপের গল্প!
গভীর নলকূপ, সমুদ্র, নদী, বড় জলাশয়, লেক, বৃষ্টি ইত্যাদির পানির গুণ ও মান ভালো থাকলে বায়োফ্লক প্রজেক্টের পানির উৎস হতে পারে।
মৎস্য গবেষক ডঃ মো. খলিলুর রহমানের মতে, বায়োফ্লকে পানির মধ্যে বিশেষ কায়দায় ব্যাকটেরিয়া তৈরি করা হয় এবং সেটাই মাছের খাবারকে রিসাইকেল করে – আবার এটা পানি পরিশোধন করতেও সক্ষম।
তবে মনে রাখতে হবে পানিতে নাইট্রোজেন আর কার্বনের ব্যালেন্স ঠিকমতো না হলে এটা কাজ করবে না এবং মাছ মারা যাবে।
তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতির মাছ চাষের অবকাঠামোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে এবং মাছের ট্যাংকের পানি পরিবর্তন করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ঠিক মতো ফ্লক তৈরি হলে পানির রং হবে সবুজ বা বাদামি, আর পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দেখা যাবে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পানির গুণাবলী
- তাপমাত্রা – ২৫ – ৩০ °C
- পানির রং – সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামী।
- দ্রবীভূত অক্সিজেন – ৭- ৮ mg/L
- পিএইচ – ৭.৫ – ৮.৫
- ক্ষারত্ব – ৫০ – ১২০ mg/L
- খরতা – ৬০ – ১৫০ mg/ L
- ক্যালসিয়াম – ৪ – ১৬০ mg/L
- অ্যামোনিয়া – ০.০১ mg/L
- নাইট্রাইট – ০.১ – ০.২ mg/L
- নাইট্রেট – ০ – ৩ mg/L
- ফসফরাস – ০.১ – ৩ mg/L
- H2S – ০.০১ mg/ L
- আয়রন – ০.১ – ০.২ mg/L
- পানির স্বচ্ছতা – ২৫ – ৩৫ সে.মি.
- পানির গভীরতা – ৩ – ৪ ফুট
- ফলকের ঘনত্ব – ৩০০ গ্রাম / টন
- TDS – ১৪০০০ – ১৮০০০ mg/L
- লবণাক্ততা – ৩ – ৫ ppt
পানিতে ফ্লক তৈরি: প্রথম ডোজে ৫ পিপিএম প্রোবায়োটিক, ৫০ পিপিএম চিটাগুড়, ৫ পিপিএম ইস্ট, পানি প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮-১০ ঘণ্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে।
পর্যবেক্ষণ
পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলে কিনা সেটা জানতে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষন করুণ –
- পানির রং সবুজ বা বাদামী দেখায়।
- পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।
- পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।
- প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে।
- ক্ষুদেপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।
২য় দিন থেকে ১ পিপিএম প্রোবায়োটিক, ৫ পিপিএম চিটাগুড়, ১ পিপিএম ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে কালচার করে প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে।
মাছের ট্যাংক যেমন হয়
বায়োফ্লক প্রজেক্ট জন্য ত্রিপল আর কংক্রিট দিয়ে ( স্থায়ী বা অস্থায়ী) দুই ধরনের ট্যাংক তৈরি করা যায়। ত্রিপল ট্যাংকগুলো রেডিমেইড পাওয়া যায়। দাম পড়ে ৯ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে, গোলাকার বা চতুর্ভূজ আকারে কংক্রিটের ট্যাংক মিস্ত্রি দিয়ে তৈরি করা যায়। এতে পানির উচ্চতা থাকবে তিন ফুট এবং ট্যাংকের ভিতরে উচ্চতা হবে সাড়ে তিন ফুট।
এখানেও প্রয়োজনে ট্যাংক থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার বা হারভেস্ট করার পদ্ধতিটা রাখতে হয়।
ট্যাংক সাধারণত একটি খাচার মতো তৈরি করা হয়, যার নিচের দিকে ঢালাই দিয়ে মাটির সাথে আটকে দেয়া যেতে পারে। এর ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় পানির পাইপ সেট করা হয়।
মেঝের মাটি শক্ত ও সমান হলে ঢালাইয়ের পরিবর্তে পরিধির সমান করে পুরু পলিথিন বিছিয়েও মেঝে প্রস্তুত করা যায়।
যে বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে
- উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎস: সঠিক উৎস হতে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করতে হবে।
- নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা: ট্যাংকের পানির যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
- তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধি: ফ্লকের বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ জনবল: এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই কারিগরি জ্ঞান সম্পূর্ণ দক্ষ জনবলের প্রয়োজন।
- সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ: ট্যাংকে সব সময় অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ লাগবে।
এরপর উন্নতমানের তারপুলিন দিয়ে সম্পূর্ণ খাঁচাটি ঢেকে দিতে হবে। তার ওপর পুরু পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত করে তাতে পানি মজুদ করতে হবে।
পানির তাপমাত্রা ২৪-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে, আর পানির রং হবে সবুজ, হালকা সবুজ বা বাদামী।
এরপর পানিতে দরকারি সব উপাদান ঠিক মতো দিয়ে ফ্লক তৈরি করতে হয়, যার জন্য দরকার হয় সার্বক্ষনিক অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের বায়োফ্লক গবেষক দলের প্রধান ড. এ এম সাহাবউদ্দিন বলেন, এই প্রযুক্তিতে মাছ চাষের পদ্ধতিটি পরিবেশ বান্ধব যা ক্রমাগতভাবে পানিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলোকে পুনরাবর্তনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করে।
বায়োফ্লকে মাছ চাষ এবং বিক্রির উপযোগী
পানিতে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বায়োফ্লক তৈরি হলে মাছ ছাড়া যাবে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণে মাছ উৎপাদন সম্ভব।
সঠিকভাবে চাষ করতে পারলে তিন মাসের মধ্যে মাছ বিক্রির উপযোগী হতে পারে বলে মত মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহানের।
প্রত্যেক প্রজাতির মাছের জন্য চাই আলাদা ব্যবস্থাপনা: গবেষক ও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, বায়োফ্লকের রসায়ন ঠিকমতো জানা না থাকলে এতে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এতে প্রত্যেক মাছের প্রজাতির জন্য আলাদা ধরণের পরিচর্যা বা ব্যবস্থাপনার দরকার হতে পারে।
সম্ভাব্য খরচঃ
- ট্যাংক নির্মাণ খরচ ৪ লাখ
- শেড নির্মাণ খরচ ৩ লাখ
- অন্যান্য খরচ (যেমন যন্ত্রপাতি, সিসি ক্যামেরা, ইলেক্টিসিটি , গভির নলকূপ ইত্যাদি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহ মোট ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা
- মাছের পোনাঃ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা
- প্রোবায়োটিকঃ ২৫ হাজার টাকা
- খাবারঃ ৪ লাখ ৫০ হাজার
- ২ জনের কর্মচারীর বেতনঃ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা
- বিদ্যুৎ বিল এবং পানির বিল ও অন্যান্যঃ ৮০ হাজার টাকা
- মোট উৎপাদন খরচঃ ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা
ট্যাংকের পরিবেশ ও পানির ব্যবস্থাপনা প্রতি মূহুর্তে নিশ্চিত করার পাশাপাশি দরকার হবে ভালো মানের মাছের পোনা।
যে সকল প্রজাতির মাছ চাষ সম্ভব: আমাদের দেশে সচরাচর চাষকৃত মাছ যেমন- তেলাপিয়া, রুই, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা ও চিংড়ীসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যেতে পারে।
তবে, যারা নতুন করে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করতে চান তারা অবশ্যই প্রথমে তেলাপিয়া, শিং ও মাগুর মাছ দিয়ে চাষ শুরু সমীচীন হবে।
সম্ভাব্য মাছ বিক্রিঃ প্রতি ট্যাংকে ৩৫০ কেজি ৩০০ টাকা কেজি।
প্রসঙ্গত, বায়োফ্লক হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন অনুজীবের সমষ্টি। সাধারণত মাছের জন্য পুকুরে যে খাবার দেয়া হয় তার উচ্ছিষ্ট পুকুরে দূষিত অ্যামোনিয়া তৈরি করে যা মাছের জন্য ক্ষতিকর।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়া থেকে একক প্রোটিন তৈরি করে যা মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
এতে একদিকে পুকুরে মাছ চাষের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তেমনি মাছের খাবার খরচ কমে যায়। ফলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়া যায়।
সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ১০ টি মাছ চাষ করা যায় , এ পদ্ধতিতে সেখানে ৩০ টি পর্যন্ত মাছ চাষ করা যায়।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষকরা জানান, এই পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনায় , ছাদে, অল্প জায়গায় এমনকি সবজি ও মাছ একসাথে চাষ করা যায়।
রোগব্যাধি
বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষে তিন ধরনের ( ব্যাকটেরিয়াল রোগ, ফাংশনাল রোগ ও উকুনজনিত) রোগ দেখা যায়।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা মোহাম্মদ নুর হোসাইন বায়োফ্লক মাছের রোগব্যাধি নিয়ে কাজ করছেন ৪ বছর ধরে।
তার মতে বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষে তিন ধরনের রোগ চিকিৎসা দিয়েই সারানো সম্ভব।
আগ্রহ বাড়ছে
স্বল্প খরচে ও স্বল্প জায়গায় মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখতে বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষে আগ্রহীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প শেষ হলে এবং তাতে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে উঠে এলে বাংলাদেশে আগামীতে বায়োফ্লকের আরও বিস্তার ঘটবে।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- অনলাইনে ছবি বিক্রি করে বাড়তি আয়!
- জমি কেনার আগে যেসব বিষয় সতর্ক থাকতে হবে, খুঁটিনাটি জেনে নিন
- অবশেষে বন্ধ হবে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট, বৈধতা যাচাই করবেন যেভাবে
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডঃ খলিলুর রহমান বলছেন, আমরা সতর্ক থেকে বায়োফ্লক নিয়ে কাজ করছি, যাতে করে উদ্যোক্তারা পরে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ঝুঁকি
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গবেষক ও মৎস্য কর্মকর্তাদের মত, ভালোভাবে নিয়ম মেনে সবকিছু করতে পারলে লাভ। কিন্তু ক্ষতি হলে হবে বড় ক্ষতি।
এই ধরনের মাছ চাষের জন্য কোথায় প্রশিক্ষন নেয়া যাবে?