বিবিসি বাংলা সম্প্রচার শুরু করে ১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারে বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল বিবিসি।
১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর বিবিসি রেডিও থেকে বাংলা অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের শুরু।
প্রথম দিকে সপ্তাহে ১৫ মিনিটের অনুষ্ঠান দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অধীন বাংলা বিভাগ থেকে এখন রেডিওতে প্রতিদিন মোট এক ঘন্টার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।
রেডিও ছাড়াও বাংলা ভাষাভাষী বহু শ্রোতা মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, আমেরিকা এবং ইওরোপ থেকে এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শোনেন।
বিবিসি বাংলা বিভাগের কর্মকান্ড পরিচালিত হয় লন্ডনে নিউ ব্রডকাস্টিং হাউজের সদর দপ্তর থেকে।
ঢাকা, দিল্লি এবং কলকাতায় তাদের নিজস্ব ব্যুরোতে কর্মরত সংবাদদাতারা ছাড়াও লন্ডনে বিবিসি অফিসে কাজ করছেন একদল সাংবাদিক/প্রযোজক।
সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠানই এখনও বিবিসি বাংলা’র সম্প্রচারের মূল উপজীব্য। এছাড়া দু’টি অধিবেশনে প্রতিদিন থাকে খেলাধূলার খবরের পাশ-পাশি নানা ধরনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান।
এছাড়াও থাকে শ্রোতাদের চিঠিপত্রের আয়োজন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিতর্ক ও লাইভ ফোন-ইন অনুষ্ঠান।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- ভয়েস অফ আমেরিকা – ভিওএ বাংলা
- চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বাংলা বিভাগ
- রেডিও জাপান – এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এর বাংলা অনুষ্ঠান
- রেডিও তেহরান – বাংলা অনুষ্ঠান
- ডয়চে ভেল – বাংলা বিভাগ
অন্যদিকে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন বিবিসির বহু সংবাদদাতা। তাদের পাঠানো তরতাজা প্রতিবেদন, তথ্য, বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিবিসি বাংলা নিয়মিতভাবে তাদের অনুষ্ঠানে প্রচার করে থাকে।
নিরপেক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সংবাদ বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে সংবাদ পরিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখনও বিবিসি বাংলা।
শর্টওয়েভ প্রচার তরঙ্গ
প্রবাহ : সন্ধ্যা ৭:৩০ – ৮:০০ (বাংলাদেশ); সন্ধ্যা ৭:০০ – ৭:৩০ (ভারত)
কিলোহার্টজ : ৯৫১০, ১১৭৫০, ১৭৬৮০
পরিক্রমা : রাত ১০:৩০ – ১১:০০ (বাংলাদেশ); রাত ১০:০০ – ১০:৩০ (ভারত)
কিলোহার্টজ : ৭৪১০, ৯৫৮০
এফএম প্রচার তরঙ্গ
ঢাকা: ১০০
বরিশাল: ১০৫
কুমিল্লা: ১০৩.৬
কক্সবাজার : ১০০.৮
ঠাকুরগাঁও : ৯২
চট্টগ্রাম : ৮৮.৮
রংপুর : ৮৮.৮
রাজশাহী : ৮৮.৮
সিলেট: ৮৮.৮
খুলনা: ৮৮.৮
এ ছাড়া ওয়েবসাইটে লাইভ শুনুন – bbc.com/bengali
যোগাযোগ ঠিকানা
- Bengali Service, BBC World Service, 5th Floor, Zone-A, New Broadcasting House, Portland Place, London W1A 1AA United Kingdom
- বিবিসি বাংলা বিভাগ পোস্ট বক্স ২০৬০, ঢাকা ১০০০ বাংলাদেশ
- ইমেইল: [email protected]
- টেলিফোন: +44 0208 743 8000
কীভাবে সংবাদ হয়ে উঠল বিবিসি বাংলা এর মূল উপজীব্য :
শুরুর দিকে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠানে সংবাদ গুরুত্ব পেত না; ১৯৬৫ সালে প্রথম যুক্ত হল সংবাদ।
ওই বছরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের নির্ভরযোগ্য আর নিরপেক্ষ খবর হিন্দি আর উর্দুর মত বাংলা অনুষ্ঠানের প্রচারের দাবি করলেন শ্রোতারা। এই দাবির প্রেক্ষিতে শুরু হল সংবাদ পরিবেশন।
দাবির পক্ষে শ্রোতাদের যুক্তি ছিল, জাতীয় বেতারে তারা শুধু কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত খবরই পাচ্ছেন।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে সম্পূর্ণ বিবর্তন হয় বিবিসি বাংলা বিভাগের, গুণী সাংবাদিকের পাশাপাশি একদল নতুন সাংবাদিকের যোগদানের মধ্য দিয়ে।
তখন অধিবেশন গুলো সাজানো হত সংবাদ আর নানা ধরনের বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের সংমিশ্রণে। তবে, তখনো বাংলা বিভাগের জন্য সংবাদ সংগ্রহের কোনও নেটওয়ার্ক তৈরি হয়নি।
আন্তর্জাতিক খবরগুলো মূলত অনুবাদ করে সম্প্রচারিত হতো।
২০০১ সালে বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠানের চেহারা অনেক বদলেছে। বেতারের পাশাপাশি টিভিতে বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে সাংবাদিকতার একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বিবিসি বাংলা’র জন্য।
নানা আঙ্গিকের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে বিবিসি বাংলা’র বেতার ও টিভি অনুষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সংলাপ’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
শুরুর দিকে কেমন ছিল অনুষ্ঠানের ধরণ
১৯৪১ সালের যাত্রা শুরুর সময় বিবিসি বাংলাতে প্রতি সপ্তাহে প্রচারিত হতো একটি মাত্র অনুষ্ঠান, যা ছিল মূলত একটি ‘নিউজলেটার’। অনুবাদ করে তা পড়তেন বিভিন্ন জন।
এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য শুরু হল ‘বিচিত্রা’ নামের একটি ম্যাগাজিন। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করতেন কমল বোস এবং রেখা আলী।
পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্যও ১৯৪৯ সালে তৈরি হল ‘আঞ্জুমান’ নামে আলাদা একটি অনুষ্ঠান। সেটিও ছিল বিচিত্রার ঢঙে। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করতেন নাজির আহমেদ।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- রেডিও ভেরিতাস এশিয়া, বাংলা বিভাগ
- সৌদি আন্তর্জাতিক বেতার – বাংলা বিভাগ
- আকাশবাণী মৈত্রী- অল ইন্ডি
- রেডিও পাকিস্তান – বাংলা বিভাগ
- জাতিসংঘ রেডিও – বাংলা অনুষ্ঠান
- রেডিও কুয়েত – বাংলা অনুষ্ঠান
এক যুগ পরে সকালের প্রত্যুষা বন্ধ , ফিরল রাতের পরিক্রমা
বিবিসি বাংলা প্রথম ‘প্রভাতী’ নামে একটি সকালের অনুষ্ঠান শুরু করে ১৯৬৯ সালে।
অন্যদিকে শহুরে শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখে ছ’টার প্রভাতী বহাল রেখেই ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি বিবিসি বাংলার সকালের দ্বিতীয় অধিবেশন ‘প্রত্যুষা’-র যাত্রা শুরু হয়।
কাকতালীয় ভাবে, তের বছর পর একই দিন, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ই জানুয়ারি ‘প্রত্যুষা-র শেষ পর্ব প্রচারিত হল। এই অধিবেশন বন্ধের মধ্য দিয়ে সকালে বিবিসি বাংলার সব অনুষ্ঠান পুরোপুরিই বন্ধ হল।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ বাংলাদেশে সময় ভোর সাড়ে ৬টায় প্রভাতী এবং রাত সাড়ে ১০টায় পরিক্রমার শেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
তবে, বন্ধ রাতের পরিক্রমা অনুষ্ঠান ফের ফিরিয়ে আনা হল ২০২০ সালের ১১ই জানুয়ারি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন বিবিসি বাংলা রেডিওতে চারটি অনুষ্ঠান প্রচার হতো।
ডিজিটাল মাধ্যমে বিবিসি
বর্তমানে বিবিসি বাংলা রেডিওতে দু’টো অনুষ্ঠান কমিয়ে সন্ধ্যা ও রাতের অনুষ্ঠান দুটো চালু রেখেছে।
রেডিওতে অনুষ্ঠান কমিয়ে আনলেও বিবিসি বাংলার টিভি অনুষ্ঠান প্রবাহ চ্যানেল আইতে সপ্তাহে একদিন প্রচার হতো। তা কিছুদিন থেকে দুইদিন প্রচার হচ্ছে।
এছাড়া ক্লিক নামে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানও প্রচার হচ্ছে।
টিভি কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে আরও সক্রিয় হয়েছে বিবিসি বাংলা। এরই মধ্যে বিবিসি বাংলার ফেসবুক পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি ৩৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
রেডিওর অডিও কনটেন্ট রাখার পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে টেক্সট, ভিডিও বেশি করে যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমানতালে উপস্থিত থাকছে এই ব্রিটিশ গণম্যাধ্যমের বাংলা বিভাগ।
একাত্তরে স্মরণীয় বিবিসি
১৯৭১ সালে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিবিসি’র (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জাতির ঘোর দুর্দিনে এই সংবাদ মাধ্যম কোটি কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়।
সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে, যখন বিশ্বে এখনকার মতো এত গণমাধ্যম ছিল না, তখন লন্ডনভিত্তিক বিবিসি প্রায় দিশেহারা বাঙালি জাতিকে সঠিক তথ্য দিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত শীর্ষ ২০ বাঙালির ওপর বিবিসি অনুষ্ঠান প্রচার করে।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের হাজার হাজার শ্রোতা চিঠি, ই-মেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন পাঠায়।
শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে শীর্ষ ২০ জন বাঙালির তালিকা।
২৬ মার্চ ২০তম স্থান লাভকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম প্রথম প্রচারিত হয়। এরপর ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান, ১৮। অতীশ দীপঙ্কর, ১৭। স্বামী বিবেকানন্দ।
১৬। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ১৫। বায়ান্নর ভাষা শহীদগণ, ১৪। ড. অমর্ত্য সেন, ১৩। সত্যজিৎ রায়, ১২। লালন শাহ, ১১। মীর নিসার আলী তীতুমীর, ১০। রাজা রামমোহন রায়, ৯। মওলানা ভাসানী।
৮। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর, ৭। জগদীশ চন্দ্র বসু, ৬। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত, ৫। সুভাষ চন্দ্র বোস, ৪। আবুল কাশেম ফজলুল হক, ৩। কাজী নজরুল ইসলাম এবং ২ নম্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হয়।
এরপর, ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এখনো জনপ্রিয়
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে গণমাধ্যমটি ঝুঁকি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে, এখনো এটি সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে।
গণমাধ্যমের বিস্তারের পাশাপাশি একপেশে সংবাদ পরিবেশনের প্রবণতা বেড়েছে কিন্তু বিবিসি বাংলা তার নিরপেক্ষতা, তথ্যবহুল প্রতিবেদন, বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান ও পেশাদারিত্বের জন্য গণমানুষের কাছে এখনো জনপ্রিয়।