সাঙ্গু নদী বা শঙ্খ নদীর প্রবাহপথটাও বেশ বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশের নদীগুলো মূলত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সাঙ্গু দক্ষিণ থেকে প্রথমে গেছে উত্তরে, তারপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে এগিয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বৃহত্তম জলধারা সাঙ্গু। মন পাগল করা, অদ্ভুত সুন্দর এক পাহাড়ী নদী। মারমা উপজাতিরা তাদের ভাষায় ‘সাঙ্গু নদী’কে ‘রেগ্রীইং খ্যং’ অর্থাৎ ’স্বচ্ছ নদী’ নামে ডাকে আদিকাল থেকে।
বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের চট্টগ্রাম ও বান্দরবন জেলার একটি নদী সাঙ্গু । পাহাড়ের কোল বেয়ে এঁকেবেঁকে চলা এ নদী কোথাও উন্মত্ত আবার কোথাওবা শান্ত ।
পাহাড়ি এলাকার প্রকৃতি অনুযায়ী অসংখ্য ছোটবড় ঝর্ণা থেকে সৃষ্টি হওয়া ছোট ছোট পাহাড়ি নদী বা ছড়া এসে মিশেছে সাঙ্গু নদীতে।
সর্পিলাকার সাঙ্গু নদী’র দৈর্ঘ্য ২৯৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৯ মিটার। কর্নফুলীর পর এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড় থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ভিতর দিয়ে ১৭৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অবশেষে কর্ণফুলি হয়ে বঙ্গপোসাগরে পড়েছে সাঙ্গু।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক সাঙ্গু নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৫।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- ‘হালদা নদী’ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র
- কর্ণফুলী নদী: হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের অমর সাক্ষী!
- কালুরঘাট সেতু: ঐতিহ্যের স্মারক হালুরঘাডর পোল!
সাঙ্গু বা শঙ্খ নদীতে চলাচল করা ছোট-বড় ইঞ্জিন বিহীন দেশি কাঠের নৌকা ছিলো পুরো বান্দরবানের যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম।
কিন্তু চার দশকে সাঙ্গু নদী যেমন তার রূপ পাল্টেছে, তেমনি আমূল বদলে গেছে এর চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। একই সঙ্গে বদলে গেছে জন জীবন যাত্রা।
শঙ্খ থেকে সাঙ্গু নদী
বাংলাদেশের নদীগুলো মূলত উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগের বৃহত্তম জলধারা সাঙ্গু দক্ষিণ থেকে প্রথমে গেছে উত্তরে, তারপর পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে এগিয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে।
এই সীমান্ত নদীরই একটি অংশ ‘অমায়ক্রি চং’ বা ‘রেমাক্রি চং’ বা প্রধানমন্ত্রীর খাল। মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বশেষ রেমাক্রি ইউনিয়নের নাম এ রেমাক্রি চং-এর নাম অনুসারেই।
এই যে শঙ্খ থেকে সাঙ্গু আর অমায়ক্রি থেকে রেমাক্রি নামকরণ, তার কিন্তু রয়েছে বেশ মজার ইতিহাস।
অমায়ক্রি অর্থ প্রধানমন্ত্রী। আর অমায়ক্রি চং অর্থ প্রধানমন্ত্রীর খাল। রেগ্রীইং বোমাংগ্রী বা শঙ্খনদীর রাজা এবং অমায়ক্রি চং বা প্রধানমন্ত্রীর খাল নামের অর্থ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, এসব নদী বা খালই হলো এ এলাকার জনবসতি স্থাপন, জীবনধারণ ও শাসনকার্য চালানোর অন্যতম পাথেয়।
থানচি ও রেমাক্রির স্থানীদের মতে, সম্ভবত ১৮৬০ সালে বৃটিশ আমলে সরকারি গেজেটিয়ার প্রকাশের সময় বাঙালি আমলারা ‘শঙ্খ নদী’ নাম নথিভুক্ত করে। আর ইংরেজিতে এটা লেখা হয় sangu। তারা শঙ্খকে সাঙ্গু নামে চিনেছেন ১০-১২ বছর আগ থেকে।
এক নজরে সাঙ্গু নদী
- উৎপত্তি: বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড়।
- প্রবাহ: চট্টগ্রাম ও বান্দরবন জেলার একটি নদী।
- ভিন্ন নাম: ‘রেগ্রীইং খ্যং’ অর্থাৎ ’স্বচ্ছ নদী’
- দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ: নদীর দৈর্ঘ্য ১৮০ কিমি, প্রস্থ ১৫০ মিটার।
- গভীরতা: গভীরতা ১৫ মিটার।
- আয়তন: নদীর অববাহিকার আয়তন ১ হাজার ২৭৫ বর্গকিমি।
- পানিরা প্রবাহ: এই নদীর পানিপ্রবাহ বারমাসি প্রকৃতির।
- জোয়ার-ভাটা: চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও বাঁশখালী অংশে জোয়ার-ভাটার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
তবে স্থানীয় উপজাতি মারমারা ‘শঙ্খ’ বা ‘সাঙ্গু নদী’কে বলে ‘রেগ্রীই খ্যং’ বলে আসছেন। ‘রে’ মানে পানি আর ‘গ্রীই’ অর্থ পরিষ্কার অর্থাৎ রেগ্রীই খ্যং অর্থ পরিষ্কার বা স্বচ্ছ পানি।
এখনো তিন্দু, থানচি, বান্দরবানের মানুষ বোমাং রাজাকে রেগ্রীইং বোমাংগ্রী বলে। এর অর্থ শঙ্খনদীর রাজা।
‘প্রধানমন্ত্রীর খাল বা অমায়ক্রি চং’ এর ইতিহাস
রেমাক্রির স্থানীয় লোকজন জানান, এক সময় আরাকানের এক রাজা ছিলেন। লঞ্চডুবিতে তার মৃত্যু হবে বলে জানতেন তিনি।
তাই তার প্রধানমন্ত্রীকে একটি আংটি দিয়ে বলেছিলেন- আমি হয়তো মরে যাবো। তুমি এই আংটিটা রাখো।
আমি মারা গেলে তোমাদের রানীর কাছে গিয়ে বলবে- এই আংটিটা যার হাতে সুন্দরভাবে খাটবে সে রানীকে পুনরায় বিয়ে করে রাজা হবে।
একদিন রাজা ও প্রধানমন্ত্রী দু’টো লঞ্চে করে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর লঞ্চটা ছিল সামনে। সত্যিই লঞ্চটা ডুবে মারা যান রাজা।
পরে প্রধানমন্ত্রী রানীর কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বললে রানী তাকে বলেন- ‘তুমি রাজাকে মেরে ফেলেছো আমাকে বিয়ে করার জন্য।
এমন পরিস্থিতিতে রানীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে এই খাল দিয়ে সাঙ্গু নদী হয়ে ত্রিপুরায় গিয়ে রাজ্য স্থাপন করেন ওই প্রধানমন্ত্রী।
তখন থেকেই একে প্রধানমন্ত্রীর খাল বা অমায়ক্রি চং বলা হয়।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, ধ্বনিবিপর্যয় থেকে নামের এ পরির্বতন হয়েছে। এভাবেই শঙ্খ হয়েছে সাঙ্গু, আর অমায়ক্রি হয়েছে রেমাক্রি।
‘সাঙ্গু নদী’ বেশ বৈচিত্র্যময়
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘বাংলাদেশের নদনদী বইতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আরাকান পর্বতে উৎপন্ন হয়ে থানচি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর রুমা, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান সদর ছুঁয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও বাঁশখালী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে সাঙ্গু।
উত্তরে আরাকান পর্বত থেকে এর ভৌগলিক অবস্থান ২১.১৩ ডিগ্রি উত্তর ও ৯২.৩৭ ডিগ্রি পূর্বে। উৎসমুখ থেকে শুরু করে সাগরে পতিত হওয়ার পয়েন্ট পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ১৮০ কিলোমিটার।
দৈর্ঘ্য বিবেচনায় বান্দরবানের বুক চিরে প্রবাহিত অপর দুই সীমান্ত নদী নাফ (৬৪) ও মাতামুহুরি (১২০) এবং বান্দরবানের পাহাড়ি ছড়া থেকে উৎপন্ন হওয়া তিন নদী হারবাংছড়া (২৮), সোনাইছড়ি (২৪.৫০) ও বাঁকখালির (৯০) চেয়ে বড় হওয়ায় সাঙ্গুই সবচেয়ে বড় ও প্রধান নদী এই পাহাড়ি জেলায়।
বারোমাসী প্রবাহের এ নদীর অববাহিকার আয়তন ১২৭৫ বর্গ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার।
সবচেয়ে কম প্রবাহের মাস মার্চ ও এপ্রিল। এ সময় এ নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হলেও সবচেয়ে বেশি প্রবাহের মৌসুম জুলাই-আগস্ট মাসে। সেকেন্ডে ২ হাজার ৭শ’ ঘনমিটার পানি বয়ে যায় সাঙ্গুর বুকে।
কম প্রবাহের মৌসুমের গভীরতা ১ মিটার থেকে বেড়ে বেশি প্রবাহের মৌসুমে হয়ে যায় ১৫ মিটার। এ নদীর চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও বাঁশখালি অংশে নিয়মিত প্রভাব আছে জোয়ার-ভাটার।
ছোটবড় ঝর্ণা থেকে সৃষ্টি হওয়া ছোট ছোট ছড়া এসে মিশেছে শঙ্খ নদীতে। এ নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দাদের অধিকাংশই মারমা বা অন্য কোনো নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। তাদের অধিকাংশেরই পেশা আবার জুম চাষ।
কয়েক দশক আগেও এ নদীর দু’তীরে ছিল ঘন বন। সে বনে বিচরণ করতো হাতি, বাঘ, ভালুক, হরিণ, বানর, বনবেড়াল, ময়ূর, হনুমান, উল্লুকসব আরো অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণি। ছিলো অনেক প্রজাতির অজগর।
নদীর জলে অবাধে সাঁতরাতো রুই-কাতলা, গলদা চিংড়ি, শোল, মাগুর, সিং, মৃগেলসহ আরো কতো নাম না জানা মাছ। নদী অববাহিকায় প্রচুর পলি জমতো পাহাড়ি ঢলে। সার ছাড়াই হতো ধান, ডাল, শাক-সবজি, বাদামের বাম্পার ফলন।
বান্দরবানের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যমও ছিলো এ নদী। সব মিলিয়ে বান্দরবানবাসীর জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস ছিলো সাঙ্গু।
কিন্তু নির্বিচারে নদী তীরবর্তী বৃক্ষ নিধনে প্রাণী বৈচিত্র্যের স্বভাবটাই যেন পাল্টে গেছে সাঙ্গুর। একই পাহাড়ে বারবার জুম চাষে ভূমিক্ষয় বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বর্ষাকালে তাই স্বচ্ছজলের নদী হয়ে যায় ঘোলা।
ভরাট হওয়া নদীর বুকে বাধা পায় বর্ষার পানি। বর্ষাকালে এখন ঠিকই প্লাবিত হয় নদী অববাহিকার অনেক স্থান। জলাবদ্ধতাও তৈরি হয় কোথাও কোথাও।
সাঙ্গুপাড়ের জমিতে এখন আর পলি জমে না আগের মতো। সার-কীটনাশকেও পাওয়া যায় না কাঙ্ক্ষিত ফলন। কিন্তু নদীর পানিতে বিষ ছড়িয়ে পড়ে ঠিকই। এ নদীর ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি উপকারী পোকামাকড়ের তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে উঠেছে।
নয়নাভিরাম পাথুরে নদী
বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে আবার এ দেশেই শেষ হয়েছে সাঙ্গু নদীর গতিধারা। আর এই গতি ধারা ধরে রাখতে এ নদীকে সমৃদ্ধ করেছে ছোট-বড় অন্তত দু’শ ঝিরি বা ঝর্ণা।
আবার দু’কূল উর্বর হয়ে উঠেছে এ নদীর শান্ত পানিতেই। গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আবাস।
অন্যদিকে, দেশের সব নদীই বয়ে আনে পলিমাটি। কিন্তু বৈচিত্র্যপূর্ণ শঙ্খ কিংবা সাঙ্গু নদী, পলি মাটির পরিবর্তে নানা ধরনের পাথরে ভর্তি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শঙ্খ ও সাঙ্গু নদী জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা ধরণের পাথর। ছোট কিংবা মাঝারি সাইজের পাথর যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিশাল বিশাল পাথরও।
মনে হবে যেন, কোনো ভাস্কর্য শিল্পী নিজ হাতেই পাথরগুলোকে সাজিয়ে রেখেছেন। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও পাথরগুলোর কোনো নড়-চড় নেই।
আবার স্বচ্ছ পানিতে চোখ রাখলে দেখা যাবে নদীর তলদেশটিও পাথরের। পাথুরে নদীতে এগিয়ে চলছে পর্যটকবাহী নৌকা।
নদী যেমন রূপ পাল্টেছে, তেমনি আমূল বদলে গেছে চারপাশের পরিবেশ
গত চার দশকে শঙ্খ নদী যেমন তার রূপ পাল্টেছে, তেমনি আমূল বদলে গেছে এর চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। একই সঙ্গে বদলে গেছে জনজীবন যাত্রা।
আটের দশকে বান্দরবান একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এদিকে বন বিভাগ স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্মের পাশাপাশি বান্দরবান সদরে দুটি ও লামা উপজেলায় একটি ‘পাল্প উড ডিভিশন’ নামে তিনটি বিশেষ শাখা সম্প্রসারণ করে।
এর পর প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংকুচিত হয় জুম চাষের জায়গা। ফলে একই পাহাড়ে স্বল্প সময়ে বার বার জুম চাষ করায় হ্রাস পায় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সৃষ্টি; পাহাড়ের ভূমিক্ষয়ও বাড়তে থাকে।
এছাড়া বান্দরবানকে জেলা হিসেবে ঘোষণার পর পাহাড় ও বনাঞ্চল কেটে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা।
এর ফেলা পাহাড়গুলোর মাটি প্রতিনিয়তই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে ঝর্ণা ও ছড়ার মাধ্যমে মিশছে শঙ্খ নদীতে। ফলে বছরের পর বছর পাহাড়-কাটা মাটি শঙ্খ নদীতে জমা হওয়ায় দিন দিন কমছে এর গভীরতা।
ভরাট হতে বসেছে শঙ্খ নদী। বর্ষাকালে তাই এ নদীর গতি প্রবাহ এখন বাধাগ্রস্থ হয়। এর দুকূলে দেখা দেয় প্লাবন।
এছাড়া চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক নির্মাণের ফলে বর্ষাকালে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ হচ্ছে বাধাগ্রস্থ। এ জন্য এখন সামান্য বৃষ্টিতে দুর্গম পাহাড়ে তো বটেই, এমন কি বান্দরবান জেলা সদরেও দেখা দেয় জলাবন্ধতা।
বৃষ্টির পানি এখন আগের মতো সহজেই গড়িয়ে নেমে যায় না। শঙ্খ নদীতে নাব্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রাণ-বৈচিত্রের স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়।
ভরা যৌবনা সাঙ্গু’র অধিকাংশ মাছই বিলুপ্তির পথে
ভরা যৌবনা সাঙ্গু নদী এখন ক্ষীনস্রোতা ও নির্জীব। আর এ সুযোগে নদীতে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার করছে একশ্রেণীর জেলে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর একসময়ের সমৃদ্ধ মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য।
এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা শহরের শতাধিক হোটেল ও হাজারো বাসা বাড়ির পয়োঃবর্জ্য – আবর্প্রজনা প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে সাঙ্গু নদীতে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে পানির গুনাগুন।
বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার ও নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ না করলে সাঙ্গু’র মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবেনা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- চুনতি অভয়ারণ্য: এশিয়ান হাতির প্রজননক্ষেত্র
- চন্দনাইশের পেয়ারা: পথ দেখাচ্ছে স্বাদের ‘কাঞ্চন নগরের গয়াম’
- ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিল: চট্টগ্রামের শস্য ভাণ্ডার
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ী নদী সাঙ্গু। খরস্রোতা এ নদীতে একসময় মিলত ৩৯ প্রজাতির মাছ। কিন্তু এখন অধিকাংশ মাছই বিলুপ্তির পথে।
বান্দরবান জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একসময় বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে ডানকিনা, চিতল, তেলাপিয়া, চেলা, চেবলি, চাটকিনি, গুরামুইক্কা, মহাশোল, পাবদা, চিরিং, বাইম, জাত পুটি, ফান্ডা, বোয়াল, বাটা, ফান্ডা বাটা, বামশ, বেলিটুরা, কেচকি, কানকিলা, কাটা চান্দা, কই বান্দি, মৃগেল, বাইলা, গুইল্লা, ছোঁয়া চিংড়ি, গলদা চিখড়ি গুচি বাইম, ঘারুয়া বাচ্চা, কুচিয়া, আইড়, শাল বাইম, কই, দেশি মাগুর, টাকি, ঘনিয়া, চিংড়ি, জায়ান্ট গলদা চিংড়ি, রুই, ভেদা ও কাতলাসহ ৩৯টি প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত।
কিন্তু এখন এর অধিকাংশ মাছই প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট