ইয়োলো জার্নালিজম: সব যুগান্তকারী সূচনা মার্কিন মুলুক থেকেই। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা এবং তা দিয়ে লোক ঠকানো – সবই সারা বিশ্ব ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার থেকে শিখেছে।
ইয়োলো জার্নালিজম ও তাঁদেরই দান। বাংলায় এই ধরণের সাংবাদিকতা হলুদ সাংবাদিকতা বা পীত সাংবাদিকতা নামে পরিচিত।
১৮৯০ সালের গোড়ার দিকের কথা। সেই সময় এই ইয়োলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতার সূচনা।
পাঁচ বছর এই রকম রগরগে খবর ক্রমাগত ছাপা হওয়ার পর ১৮৯৫ সালে গিয়ে শেষ পর্যন্ত থামে।
আর যে দুই ব্যক্তিত্ব এই পীত সাংবাদিকতার সূচনা করেছিলেন, তাঁদের নাম শুনলেও চক্ষু চড়ক গাছ হতে হয়।
একজন হলেন নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের জোসেফ পুলিৎজার আর অপরজন নিউ ইয়র্ক জার্নালের উইলিয়াম ব়্যাণ্ডলফ হার্স্ট।
খবর কাগজ বেচার নেশায় দু’জনে যা নয়, তাই শুরু করে বসেন।
নিজেদের ইচ্ছে মতো, ভুয়ো খবর ভুয়ো নাম দিয়ে প্রকাশ করা থেকে শুরু করে জোর করে গল্প সাজিয়ে মিথ্যা ঘটনা তুলে ধরা – সবই পাঠকের কাছে মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করে কাগজ বেচার টেকনিক।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- সাংবাদিকতা নয়, পাবলিক রিলেশনস
- কমিউনিটি রেডিও: প্রান্তিক এলাকার কণ্ঠহীনদের কণ্ঠস্বর
- ভাল রেডিও উপস্থাপনার চাবিকাঠি
খবর বেচার নেশায় মত্ত পুলিৎজার তাঁর কর্মীদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার পর্যন্ত করতেন আর সেই সব সাংবাদিকদের টাকার লোভ দিয়ে নিজের কাগজে টেনে আনতেন হার্স্ট।
যাইহোক, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তেই হলো এবং সব ঘটনা সামনেও চলে আসে। আজ সব ইতিহাস হলেও, উপমাটা রয়েই গিয়েছে।
ইয়োলো জার্নালিজম নামটা কোথা থেকে এলো এবার সেটা বলা যাক…
ওই দুই পত্রিকায় পাঠক আকর্ষণের জন্য বেশ চটকদার মোড়কে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি নানান খবরের সঙ্গে কার্টুন স্ট্রিপের ব্যবহার হতো।
পুলিৎজারের নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড সে সময় একটি কমিক স্ট্রিপ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করে। নাম ছিল হোগান’স অ্যালি।
তাতে মূল চরিত্রে ছিল হলুদ জোব্বা পরা ন্যাড়া মাথার এক দুর্দান্ত সাহসী বাচ্চা। রাতারাতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাচ্চাটি, নাম পড়ে যায় – ইয়োলো কিড।
এর পরপরই হার্স্টও একই রকম কার্টুন স্ট্রিপের ব্যবহার করেন নিউ ইয়র্ক জার্নালে। সরাসরি নাম দেওয়াও হয় ইয়লো কিড। তার পরনেও একই রকম পোশাক।
দুই ক্ষেত্রেই কার্টুন স্ট্রিপের সঙ্গে রাজৈনিতক খবর পরিবেশনের সেরকম কোনও যোগাযোগ না থাকলেও শ্রেফ জনপ্রিয়তার কারণে সেই সময়কার খবর পরিবেশনের ধারার নাম বদলে যায় প্রতি রবিবার করে খবরের পাতায় এসে পড়া হলুদ জোব্বা পরা দুই বাচ্চার দৌলতে।
তখন থেকেই ভুয়ো সাংবাদিকতার নাম পড়ে যায় ইয়োলো জার্নালিজম আর তার সূচনা হয় নিউ ইয়র্ক শহর থেকেই।
ভাবলে অবাক লাগে, তাঁদের জনকরা আজ স্বনামধন্য, কিন্তু তাঁদের কৃতকর্মের দায় নিউ ইয়র্ক শহরের দুই নিষ্পাপ কমিক শিশু চরিত্র আজও বয়ে বেড়াচ্ছে।
উত্তর দেওয়ার পর পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ।
মনে পড়ে যাচ্ছে, বইতে পড়া ইতিহাসের সেই চ্যাপ্টারগুলি। সব তথ্য হয়ত হুবহু মনে থাকে না, কিন্তু শুনলে পরে অচেনা লাগে না।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- সিটিজি টাইমস ডটকম ও ভবিষ্যৎ জার্নালিজম
- সিটিজি টাইমস এখন ৩ লাখ+ পাঠকের অনলাইন!
- একজন মসরুর জুনাইদ ও ‘নান্দনিক সাতকানিয়া আন্দোলন’
আমার নীতি তো এটাই ছিল – পড়বো, কিন্তু আজীবন তা ভুলবো না।
মার্কশিটের মার্কস একদিন মুছে যায়, সঙ্গে থেকে যায় শুধু শেখা আর অর্জন করা জ্ঞানটা।
একজন সাংবাদিকের কাছে পিঠ চাপাড়ানিটা বড়ো নয়। বড়ো হলো দিনের শেষে সত্যটা বলতে/জানাতে পারলাম কি না, নির্দ্বিধায়!
সুত্রঃ quora