কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীর তীরে কাপ্তাইয়ে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নিয়ে কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়৷ বর্তমানে এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট৷
বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ পার্বত্যঞ্চলের এক যুগান্তকারী ঘটনা।
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই বাঁধ নির্মাণ এই অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়।
কাপ্তাই বাঁধ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৫২ সালে ও শেষ হয় ১৯৫৮ সালের প্রথম দিকে।
কিন্তু যখন বাঁধের সব spill way বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন বাঁধটি ভেঙ্গে যায়।
তারপর পাকিস্তান সরকার আমেরিকার সাহায্যে আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯৬১ সালে শেষ হয়।
১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীর তীরে ৪৬ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়৷
বর্তমানে এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করেই পাওয়া যায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ।
কাপ্তাই বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে ৩৫০ বর্গমাইল এলাকা জুডে হ্রদের সৃষ্টি হয়।
বর্ষাকালে হ্রদের পানি বেড়ে গেলে কাপ্তাই হ্রদের আয়তন হয় ৪০০ বর্গমাইল।
এই হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৬৮.৮০০ হেক্টর এবং সর্বনিম্ন ৪৮.৩০০ হেক্টর।
হ্রদের পানির বার্ষিক গড় আয়তন ৫২৪.৭ হেক্টর ঘন মিটার।
কাপ্তাই হ্রদে পানির সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৬ মিটার এবং গড় গভীরতা ৯ মিটার।
তবে সাধারণভাবে হ্রদে সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল) পানি ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে কর্ণফুলীর ভাটির সমতলের চাষীরা লাভবান হয়েছে, মাছ চাষ আর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের সমাদর পেয়েছে স্থানটি।
পার্বত্য এলাকায় বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘটনা এটাই বিশ্বে প্রথম নয়।
নরওয়ের ‘আল্টা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’, ভারতে ‘সরদার সারোভার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ কিংবা কানাডার ‘জেমস বে প্রকল্প’ সবকয়টির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল পার্বত্য এলাকা।
কাপ্তাই বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের শুরু যেভাবে
১৮৬০ সালে লর্ড ক্যানিংয়ের বাইশতম প্রশাসনিক আদেশক্রমে সৃষ্টি হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে মূলত কয়েকটি নদীর উপত্যকায় ভাগ করা যেতে পারে।
এর মধ্যে আছে চেঙ্গি, মৈনি, কাসালং, রানখিয়াং আর সাঙ্গু নদী। সাঙ্গু বাদে বাকি সবগুলোই কর্ণফুলীর শাখা।
কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচকাজ এবং ড্রেনেজ সুবিধা পাওয়ার জন্য ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার এবং দাতা সংস্থা ইউসএইড (USAID) কাজ শুরু করে।
কিন্তু এর আরও আগে ১৯০৬ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ব্রিটিশ শাসনামলে।
১৯২৩ সালে চালানো হয় জরিপ এবং বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হয়।
১৯৪৬ সালে পূর্ব বাংলায় নিযুক্ত ব্রিটিশ প্রকৌশলী ই.এ. মুর কাপ্তাইয়ের ৪০ মিটার ওজানে ‘বারকাল’ নামক স্থানে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তনের পর ১৯৫১ সালে প্রকৌশলী খাজা আজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল বাঁধের স্থানটি চুড়ান্ত করে।
একাপ্তাই বাঁধ এর কাজে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানকে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়।
বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘উটাহ ইন্ট্যারন্যাশনাল ইনকর্পোরেশন’ নামক প্রতিষ্ঠানকে।
১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে বাঁধ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয়।
১৯৬২ সালের ৩০ মার্চ যখন এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়, তখন এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ছিলো দুটি, প্রতিটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো চল্লিশ মেগাওয়াট করে।
শুরুতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিলো ৮০ মেগাওয়াট।
বর্তমানে এর ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট এবং মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ২৩০ মেগাওয়াট।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে কাপ্তাইতে ৬৭০.৬৫ মিটার লম্বা আর ৪৫.৭ মিটার উঁচু এই বাঁধ নির্মাণে মোট খরচ হয় ৪.৯ কোটি রুপি।
ধনুকের মত বাঁকা ৬৭০ মিটার দীর্ঘ কাপ্তাই বাঁধ-এ রয়েছে ১৬টি স্লুইস গেট।
এরপর দীর্ঘদিনেও কাপ্তাই ড্যামের কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। কাপ্তাই ড্যামের আয়ুষ্কাল ৯০ বছর। সেই হিসাবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত হয়তো টিঁকে থাকবে এটি।
পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়াই হলো নদী কিংবা জলের গতিপথে বাঁধ দিয়ে প্রথমে পানি জমা করা হয়।
এরপর জমা হওয়া বিপুল পরিমাণ পানিকে নির্দিষ্ট চ্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়।
এতে জমা হওয়া পানির বিভব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ।
কোনো ধরনের কার্বন নিঃসরণ না করেই পাওয়া যায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- কর্ণফুলী নদী: হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের অমর সাক্ষী!
- সাঙ্গু নদী: অদ্ভুত সুন্দর এক পাহাড়ী নদী
- ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিল: চট্টগ্রামের শস্য ভাণ্ডার
কাপ্তাই বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে কর্ণফুলীর ভাটির সমতলের চাষীরা লাভবান হয়েছে, মাছ চাষ আর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের সমাদর পেয়েছে স্থানটি।
উৎপাদন সংকট ও ড্রেজিং
গ্রীষ্মের সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম ( কাপ্তাই ) হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদন সংকটে থাকে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
মূলত খরা মৌসুম ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ‘পানি সংকটে’ পড়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।
কোন কোন সময় প্রকল্পটির অবস্থা এতোটাই নাজুক পর্যায়ে চলে আসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর মাত্র একটি ইউনিট কোনভাবে সচল রাখা হয়।
তখন ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ৩০ মেগাওয়াট।
হ্রদের অস্বাভাবিকভাবে পানি শুকিয়ে গেলে শুধু বিদ্যুতের উৎপাদনই সংকটে পড়ে না, হ্রদের বুকে জেগে উঠে অনেক চর। এতে করে ব্যাহত হয় নৌ চলাচলও।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ প্রকল্পকে ঘিরে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মিষ্টি পানির কৃত্রিম ঝলাধার কাপ্তাই হ্রদ।
কিন্তু দীর্ঘ ৫৯ বছরে একবারও কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এতে নাব্যতা কমে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই কৃত্রিম জলাশয়। আর প্রত্যেকবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানা সংকট।
তাই দ্রুত ড্রেজিং করে নাব্যতা না ফেরালে সম্ভাবনাময় হ্রদটি পরিত্যক্ত জলাশয়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উৎপাদন খরচ
বিশালাকার টারবাইনের উপর দিয়ে জলধারা গড়িয়ে পড়ে যে শক্তি তৈরি হয় তা দিয়েই উৎপাদন হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ।
কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ পড়ে ২০-২২ টাকা সেখানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫-৩৫ পয়সা।
এত কম খরচে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সম্ভব হলেও এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষ কোনো সুনজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রামের ‘অভিশাপ’ কাপ্তাই বাঁধ
বর্ষা আসলেই চট্টগ্রামের মানুষের মনে উঁকি দেয় কাপ্তাই বাঁধ। কখন ছাড়া হচ্ছে বাঁধের পানি এ আতঙ্ক জিঁইয়ে বসেছে চট্টগ্রামের মানুষের মনে।
ভারি বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ বাড়লে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি ছাড়লেই ডুবে যায় চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটির বিস্তীর্ণ জনপদ।
বিশেষ করে কাপ্তাই বাঁধ এর ফটক খুলে দিলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী. হাটহাজারি, ফটিকছড়ি, পটিয়া, রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, ও রাজস্থলী উপজেলার সড়ক, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও পুকুর ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
গত দুই দশক ধরে এ বাঁধের পানিতে ডুবে যাওয়ার হার শুধু বেড়েই চলেছে তা নয়, পানি উঠে আসছে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও।
ফলে এ বাঁধ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এখন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রভাব ফেলেছে জীবনমানে
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি বিদ্যুতের সহজলভ্যতার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে বিপুল এলাকায় সেচ সুবিধা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
প্রত্যন্ত বরকল নদীপ্রপাত থেকে শুরু করে রাঙামাটি হয়ে উত্তরে কাসালং-এর সংরক্ষিত বনভূমি পর্যন্ত এলাকায় যাতায়াত লঞ্চ, নৌকা ও অন্যান্য জলযানের মাধ্যমে খুবই সহজ হয়েছে।
জলাধারটি চট্টগ্রাম শহর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ আশপাশের অঞ্চলকে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে চলেছে।
কাপ্তাই লেক থেকে বছরে ৭০০ টনেরও বেশি স্বাদু পানির মাছ পাওয়া যায়।
কাপ্তাই লেক
ফুরোমনের চূড়া থেকে পাখির চোখে মতো দেখা যায় কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশি। বছরের এই সময়ে নীল জলরাশির কাপ্তাই লেক, স্বচ্ছ নীলাভ জল আর বিস্তৃত দেখে মনে হতে পারে পাহাড়ের মধ্যে সমুদ্রের তীরের পৌঁছে গেছি।
কাপ্তাই লেককে বলা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর হ্রদ। এ যেন অথৈ জল ও সবুজে পরিপূর্ণ বৈচিত্র্যের এক সমাহার।
রাঙামাটি শহরের এই হ্রদের সঙ্গে পাহাড়ের অকৃত্রিম সহাবস্থান এককথায় অতুলনীয়।
এটি বাংলাদেশের একমাত্র মনুষ্য নির্মিত লেক। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করার জন্য বানানো হয়েছিল এই কৃত্রিম লেক বা হ্রদটি৷
১ হাজার ৭২২ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই কাপ্তাই লেক৷ বর্ষার ভরা যৌবনে চারপাশে আরো ৮’শ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ডুবে যেত পানিতে এক সময়৷তবে এই দৃশ্য এখন আর নেই।
চারপাশের পাহাড়ের ভূমি ধসে এবং স্থানে স্থানে চর জেগে ওঠায় হ্রদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মোটর লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ডিজেল চালিত যান্ত্রিক নৌকা নিঃসৃত কার্বনে লেকের পানির রং এখন বিবর্ণ৷
প্রধানত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এর সৃষ্টি হলেও, এ জলাধারে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়। কাপ্তাই লেকের সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে লংগদু-কাট্টলি বিল অংশে।
সারা রাত ধরে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরে। সকালে ঘাটে বহু রকমের মাছের পসরা নিয়ে বসেছে জেলেরা।
পবদা, রুই, চিতল, বড় বোয়াল, শিং, মাগুর, চাপিলাসহ বহু রকমের তাজা মাছে সমাহার, দামও বেশ সস্তা।
লেকের ছোট ছোট মাছ ধরতে বসন্তের শুরুতেও এখানে পাখিদের ঝাঁক চোখে পড়ে। সারস, সাদা বক, পানকৌড়ির চলাচল পুরো লেক জুড়ে।
কাপ্তাই লেকের আরেক দর্শনীয় স্থান শুভলং ঝরনা। বর্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এই ঝরনা।
চারদিকে সুবিশাল সবুজ পাহাড়ের মাঝে এই ঝরনার পানি পড়ার দৃশ্য অপরূপ।
শুভলংয়ের আশেপাশের পাহাড়গুলো খুবই উঁচু, খাড়া ও নয়নাভিরাম।
কাপ্তাইয়ের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে শুভলংয়ের দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য।
চারপাশে কিছু আদিবাসী গ্রাম আছে। এছাড়া নতুন চালু হওয়া রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়ক বেশ আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
এছাড়া কাপ্তাই নেভি ক্যাম্প পিকনিক স্পর্ট, প্যনোরামো জুম রেস্তোরা, গিরিনন্দিনী পিকনিক স্পর্ট, কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কর্নফুলী পেপার মিলস এসবও দারুণ উপভোগের।
কাপ্তাই লেক দেশের অন্যতম সেরা হ্রদ। দেরি না করে দেখে আসুন জলে নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি এবং দূর পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য।
প্রয়োজনীয় তথ্য
কাপ্তাই লেকে ভ্রমণ দুটো পথে করা যায়। কাপ্তাই জেটি হয়ে রাঙামাটি জেলা সদর হয়ে কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য আছে দেশি বোট এবং কাঠের তৈরি লঞ্চ।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- চুনতি অভয়ারণ্য: এশিয়ান হাতির প্রজননক্ষেত্র
- ফটিকছড়ির চা বাগান: সৌন্দর্য্যের আধার, উৎপাদনেও সেরা!
- ভাসানচর: আমূল বদলে যাওয়া এক দ্বীপের গল্প!
ভাড়া বোট বা নৌকা ভেদে পার্থক্য রয়েছে। ছোট-মাঝারি প্রতি ঘণ্টা ১৫০ টাকা।
রাঙামাটিতে রাতের থাকার জন্য আছে পর্যটন মোটেল, অরণ্যক রির্সোট, হোটেল প্রিন্স, হোটেল সুফিয়া।