সবুজ পাহাড়ের কোলে ১৮৩ একরের বিশাল ‘চুয়েট’ ক্যাম্পাস। ২০০৩ সালের (১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়েটের যাত্রা।
সাগর, পাহাড়, নদী, লেক, বনাঞ্চল ও সমতলের বিরল সমন্বয় ঘটেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের এক অপরূপা মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতেই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাস।
এই মনোরম ক্যাম্পাসে সম্মিলন ঘটেছে পাহাড়, সমতল ও লেকের। যেখানে ডানা মেলে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে চোখে পড়বে এই শিক্ষাঙ্গন—চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
২০০৩ সালের (১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুয়েটের যাত্রা।
যদিও এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই ‘বিআইটি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( চুয়েট) থেকে ৫টি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, ৩টি ইনস্টিটিউট, ৩টি গবেষণা সেন্টার থেকে স্নাতক ছাড়াও স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে।
চুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া ২৮৫ জন শিক্ষক, ১৬০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫০ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি): অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাতন্ত্র্য
- হাটহাজারী মাদ্রাসা: উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কওমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- কেন পেশাদার ই-মেইল ঠিকানা থাকাও জরুরি?
এখানে প্রতিবছর চারটি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে মোট ৮৯০ আসনের বিপরীতে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকে কাজ করছেন দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। যাদের নিরলস শ্রম ও নিবেদিত প্রয়াস দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
যেভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আজকের চুয়েট
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একটি অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে ১৯৬৮ সাল হতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালে উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তির শিক্ষাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়া।
তখন কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে পরিচালিত হত।
প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল মন্ত্রণালয়ের হাতে এবং স্থাপনা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে।
কলেজটির সার্বিক পরিচালনা ত্রিপক্ষীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকায় যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে ও বিভিন্ন জটিল সমস্যার আবর্তে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য উদ্দেশ্য অর্জন ব্যহত হয়।
নানাবিধ জটিল সমস্যাবলীর সমাধানের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৮৬ সালে দেশের ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে স্বায়ত্ত্বশাসিত বিআইটি’তে (Bangladesh Institute of Technology) রূপান্তরিত করে।
সীমিত পরিসরে স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের পরেও বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বিআইটি, চট্টগ্রাম নানাবিধ সমস্যার সম্মূখীন হয়।
শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরী সংক্রান্ত অসুবিধা, গবেষণাগারে উন্নতমানের যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বাধা হয়ে পড়েছিল।
অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিআইটি, চট্টগ্রাম ১ সেপ্টেম্বর ২০০৩ থেকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Chittagong University of Engineering & Technology) নামে যাত্রা শুরু করে।
যে বিভাগ গুলোতে পড়ছেন ছাত্রছাত্রীরা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল, সিভিল এন্ড ওয়াটার রির্সোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, যন্ত্রকৌশল, মেকাট্রনিক্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য বিভাগ, নগর ও অ ল পরিকল্পনা বিভাগ, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বিভাগসমূহে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়া পুরকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল, যন্ত্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজেস্টার এন্ড এনভায়রণমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পদার্থ বিদ্যা বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, গণিত বিভাগ, স্নাতকোত্তর ও PhD ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার আরো বিস্তার ও যুগোপযোগী করার জন্য ইনস্টটিউট অব এনার্জি টেকনোলজি, ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়াক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ-এ স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এন্ড কম্যুনিকেশন টেকনোলজির অধীনেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে।
Bureau of Research Testing & Consultancy (BRTC) মাধ্যমে বিবিধ শিল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
বিশ্বমানের শিক্ষা-গবেষণার নিমিত্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে Centre for Environmental Science & Engineering (CESE), Centre for River, Harbor & Landslide Research (CRHLSR) এবং Centre for Industrial Problems Research (CIPR)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুসরণে Computer Engineering and Information Technology, Material Science and Engineering, Nuclear Engineering প্রভৃতি বিভাগ, ১টি University Central Research Lab এবং Directorate of Continuing Education (DCE) চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশী-বিদেশী Accreditation প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমেরQuality Assurance নিশ্চিত করার লক্ষে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তত্ত্বাবধানে Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP)-এর আওতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে Institutional Quality Assurance Cell (IQAC) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন- জাপানের ইয়ামাগাতা ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান ইউনিভার্সিটি, জার্মানীর ক্যাসেল ইউনিভার্সিটি, জাপানের সাগা ইউনিভার্সিটি, ডেনমার্কের অলবর্গ ইউনিভার্সিটি, জার্মানীর স্টুটগার্ট ইউনিভার্সিটি, চীনের হারবিন ইউনিভার্সিটি, ভারতের আইআইইএসটি, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ইউনিভার্সিটি, নেপালের ন্যাশনাল সোসাইটি ফর আর্থকোয়াক টেকনোলজি-এর সাথে একাডেমিক Joint Collaboration স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, তুরষ্কের মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, জাপানের কিয়েটো ইউনিভার্সিটি, আকিটা ইউনিভার্সিটি, নিহন ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
এছাড়া জার্মানীর ক্যাসেল ইউনিভার্সিটি ও চুয়েটের যৌথ উদ্যোগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের Disaster and Environmental Engineering বিভাগের অধীনে দুই বৎসর মেয়াদী এমএসসি ইন ডিজাস্টার এন্ড এনভায়রণমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে।
প্রতি বৎসর ছাত্র-শিক্ষক জার্মানীতে ২ সপ্তাহ থেকে ৫ মাস সময়ের জন্য পড়ালেখা করে আসছে। এই ডিগ্রি এই প্রথম বাংলাদেশে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চালু হয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে South East Asian Network for Disaster & Environmental Engineering(SEAN-DEE) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই Network CUET, KUET,SUST ভারতের NIE, নেপালের Trivhuban University এর সঙ্গে যুক্ত আছে।
নেদারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে Water Resources Management এর উপর ৪ বৎসর মেয়াদী Capacity Building প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের অধীনে নদী শাসনের উপর গবেষণার জন্য একটি অত্যাধুনিক Hydraulic Lab প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে HEQEP Project-এর আওতায় Industry-University Collaboration প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিদেশী ভাষা শিক্ষা দেয়ার জন্য একটা Language Center প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জাপানী ও জার্মান ভাষা শিক্ষা ক্লাস চালু আছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো চুয়েট ক্যাম্পাস Wi-Fi নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলছে।
বৃহত্তর পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়মূলক সহযোগিতা গড়ে তোলার তোলার লক্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে Top-Up IT & ITES Foundation Skills training Project Implementation Team, LICT, Bangladesh Computer Council, Govt. of Bangladesh (PIU)-এর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুয়েটে Information Technology Engineers Examination (ITEE) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পরীক্ষাটি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালনা করা হয়।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল পরীক্ষার্থীকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা জাপানসহ এশিয়ার ১৩টি দেশে গ্রহনযোগ্য।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তত্ত্বাবধানে HEQEP-এর আওতায় Bangladesh Research and Education Network (BdREN)-এর সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ও সংযুক্ত।
এই Multi-gigabit capability সম্পন্ন High-speed Data-communications Network-এর মাধ্যমে দেশের Universities, Research Institutions, Libraries, Laboratories , Healthcare and Agricultural Institutions এবং বিভিন্ন ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থানকারী Academics, Scientists I Researchers–গণের জন্য High-end Computing, Simulation tools and Datasets-এর ব্যবহার ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে চুয়েটে Robotics Lab, animation software Lab, Mobile Apps Lab প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বা লের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘‘ Center of Excellence ’’ হিসেবে গড়ার নানামুখী নিরন্তর প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইটি সেক্টরে উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম ‘ CUET IT Business Incubator’ এবং একটি ‘IT Park ’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উক্ত কর্মসূচি সম্পাদিত হলে গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বিশ্বের খ্যাতানামা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে পারবে এবং আমাদের প্রিয় দেশকে মধ্যম আয় থেকে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর নিমিত্তে চলমান গতিশীল প্রচেষ্টায় ‘CUET IT Business Incubato’ এবং একটি ‘IT Park’ স্থাপন সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এরইমধ্যে প্রায় ৭৭ কোটি ব্যয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে দেশীয় সক্ষমতা যুগোপযোগী করতে এবং দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পটি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় চুয়েট ক্যাম্পাসে ১০ তলা ভবনের ৭ তলা পর্যন্ত ইনকিউবেশন ভবন তৈরি হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় আইটি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আইটি শিল্পে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুযোগ আরও অবারিত করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে আশা করছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
অনন্য চুয়েট ক্যাম্পাস
চুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হলে থাকেন। সাতটি আবাসিক হলের মধ্যে পাঁচ ছেলেদের ও দুটি মেয়েদের জন্য।
ক্লাসমেট, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই একসঙ্গে আবাসিক হলে থাকার অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকার এমনটা মত শিক্ষার্থীদের’
এছাড়া, চুয়েট ক্যাম্পাসে আড্ডার গাড়ি চলে ‘বিরতিহীন’! ক্যানটিন, লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, চায়ের দোকান কিংবা গোলচত্বরে সকাল থেকে রাত অবধি ছাত্রছাত্রীদের ছোট ছোট জটলা চোখে পড়ে।
রাত বাড়লে সে জটলা চলে যায় হলে যার যার ঘরে কিংবা বারান্দায়।
পরীক্ষা, পড়ার চাপের পাশে এই আড্ডাই তো হবু প্রকৌশলীদের চাঙা রাখে। আলাপের বিষয়গুলোও মজার।
কে কবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় উল্টো দিক থেকে গণনা করে উত্তর মিলিয়েছেন, শীতের দিনে কারও জন্মদিনে কাকে কীভাবে পানিতে ভেজানো হয়েছে, সবাই মিলে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়…ইত্যাদি।
চুয়েটের পরিবেশ পড়াশোনার জন্য খুব ভালো—এমনটাও বিশ্বাস করেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামূলক কাজগুলোতেও তাঁরা অংশগ্রহণ করেন।
পড়াশোনা ও গবেষণার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও শিক্ষার্থীরা বেশ এগিয়ে আছেন। ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
সংস্কৃতি চর্চার জন্য জয়ধ্বনি, বিতর্ক চর্চার জন্য ডিবেটিং সোসাইটি, পরিবেশ রক্ষার কর্মকাণ্ডের জন্য রয়েছে গ্রিন ফর পিস সংগঠন।
এ ছাড়া রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব, ফিল্ম সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও সাংবাদিক সমিতি।
অন্যদিকে রোবট-ইলেকট্রনিকস গবেষণার জন্য রোবো মেকাট্রনিকস বাংলাদেশ ও অ্যাসরোর মতো সংগঠনগুলোও কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংগঠনের নানা আয়োজনে প্রায় সারা বছরই মেতে থাকে ক্যাম্পাস।
তারুণ্যের জয়যাত্রা নিয়ে প্রতিবছরই ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজন করে প্রথম আলো-তারুণ্য উৎসব।
গ্রিন ফর পিস আয়োজন করে ‘গ্রিনডে’। আর বিভিন্ন সময়ে রোবটদৌড়, রোবটযুদ্ধের মতো অনুষ্ঠানগুলো তো আছেই।
যত অর্জন
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোবটিকস চর্চায় হরহামেশাই দেশ–বিদেশ থেকে নিয়ে আসছেন পুরস্কার।
এ ছাড়া ফেসবুক, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনি ঈশান ও মাঈনুল হাসানদের রোবট দেশ–বিদেশে নন্দিত হয়েছে। রোবটিকসের পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা।
২০১৭ সালের সারা দেশের মেয়েদের জাতীয় পর্যায়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কম্পিউটার কৌশল বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস ও সুমাইয়া বিনতে হেদায়েতের দল ‘চুয়েট ডায়মন্ড অ্যান্ড রাস্ট’ দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
২০১৯ সালের জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়ও চুয়েটের মেয়েরা দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছেন।
সম্প্রতি কম্পিউটার কৌশল বিভাগের ‘১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়ামিন ইকবাল গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এর আগে কম্পিউটার কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান মাইক্রোসফট ঘুরে বর্তমানে গুগলে গিয়ে থিতু হয়েছিলেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আলী আহমেদ আশিক যোগ দেন।
পিছিয়ে নেই শিক্ষকেরাও। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি এবং জাতীয় স্থাপনা নির্মাণকালে মাটির গুণাগুণ (সয়েল টেস্ট) নিরীক্ষার জন্য চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদেরা এখন নির্ভরতার প্রতীক।
চট্টগ্রাম শহরের তাপ অসুরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ, চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা মূল্যায়নসহ নানা ক্ষেত্রে তাঁরা সাফল্য দেখিয়েছেন।
গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের প্রধান দুই নদী হালদা ও কর্ণফুলী নদী নিয়েও।
চুয়েট এগিয়ে যাচ্ছে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রস্তাবিত ‘‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আই.টি. পার্ক’’ স্থাপনের নিমিত্তে ১০ একর ভূমির দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত প্রাপ্তির দখল বুঝে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ পূরণে, দেশের আই.টি শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভিত্তিক মানব সম্পদ উন্নয়নে ‘‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আই.টি. পার্ক’’ স্থাপনে প্রকল্পকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চুয়েটের অবস্থান চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরে। তাই চট্টগ্রাম শহর সংলগ্ন কাপ্তাই রাস্তার মাথাস্থ জানালী হাট থেকে চুয়েট ক্যম্পাস পর্যন্ত আনুমানিক ১৫ কি. মি. রেললাইন সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে একটি পত্র প্রদান করা হয়।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- কিংবদন্তির ‘চেরাগী পাহাড়’ আছে কেবল নামেই
- ‘হালদা নদী’ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র
- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বেলা বিস্কুট’ উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট!
পরবর্তীতে বহুল প্রত্যাশিত রেললাইন স্থাপনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৭ম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
চট্টগ্রাম শহরের জানালী হাট থেকে চুয়েট-পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণে প্রাথমিক সমীক্ষা ও জরিপ কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে।
একটি সুন্দর সুখী পরিবার হিসেবে চুয়েট এগিয়ে যাচ্ছে। সীমিত বাজেটের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা-গবেষণায় চুয়েট নানা সাফল্য লাভ করে দেশে-বিদেশে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।