‘মগের মুল্লুক’ কথাটি ঘৃণ্য একটি অভিধা হিসেবেই গ্রহণ করে মানুষ। মধ্যযুগে মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা’। মগদস্যুদের উৎপাতে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল বিশেষত চট্টগ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।
প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা; মধ্যযুগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মগদের ভীষণ উপদ্রব ছিল। মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা’।
সে সময়ে মগদস্যুদের উৎপাতে বাংলাদেশের উপকূল বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।
১৬৬৬ সালে বিখ্যাত শায়েস্তা খান তাদের শায়েস্তা করে চট্টগ্রাম জয়ের পর; মগদের সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটে।
ইতিহাসের নানা ঘটনার পরম্পরায় চট্টগ্রামের স্থানীয়দের কাছে এক সময় ‘মগ’ শব্দটি লুটতরাজ আর দস্যুতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
মানুষ মগ শব্দটিকে ঘৃণ্য একটি অভিধা হিসেবেই গ্রহণ করে। ‘মগের মুল্লুক’ কথাটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
মগ বা মারমা বাংলাদেশের একটি উপজাতি বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। এদের আদি নিবাস ‘ইংরা হংপ্রা’ অর্থাৎ ‘প্রাচীন বসতি আজকের চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
‘মগের মুল্লুক’ কথাটির উৎপত্তি
‘মগের মুল্লুক’ বাগধারাটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। এর অর্থ বিশৃঙ্খল অবস্থা বা অরাজক পরিস্থিতি। যে পরিস্থিতিতে কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না, কেউ কারও কথা শুনে না। খামখেয়ালি পূর্ণ।
মগ বা মারমারা উপজাতি বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী। আর মুলুক বা মুল্লুক কথাটি আরবি শব্দ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ বৃহত্তর কোন এলাকা বা দেশ।
বাংলাদেশে বসবাসকারী একটি নিরীহ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে নিয়ে কেন এমন একটি বাগবিধির উৎপত্তির পিছনে লুকিয়ে আছে; বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে বসা মগ দস্যুদের এক সময়কার বিভীষিকাময় তাণ্ডবের ইতিহাস।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম আদালত ভবন, অনন্য স্থাপত্যকীর্তি!
- কিংবদন্তির ‘চেরাগী পাহাড়’ আছে কেবল নামেই
- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বেলা বিস্কুট’ উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট!
তাদের নিয়ে অনেক গল্প কবিতা ছড়া লেখা হয়েছে। এই ভয়ানক দস্যুরা মূলত আসতো মগ রাজার দেশ থেকে।
এরা ছিল মূলত পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের রাজাকার বাহিনী।
মগরা বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসে যে অরাজকতার সৃষ্টি করতো তার মাত্রা বোঝানোর জন্য বলা হতো মগের মুল্লুক অর্থাৎ যা খুশি তাই করার দেশ।
এক সময় ঠিকই ভয়ানক মগদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়েছে বাংলা। তবে, বঙ্গবাসী কখনও তাদের উপর চলা শত শত বছরের অত্যাচারের উপযুক্ত প্রতিকার বা বিচার পায়নি।
তাই এখনও যখন আমাদের সমাজে কেউ যেমন-তেমনভাবে অন্যের উপর প্রভাব খাটায়, অত্যাচার করে, দুর্বল মানুষকে কষ্ট দেয় তখন মগদের সময়ের কথার সঙ্গে সেটা তুলনা করে বলা হয়, মগের মুল্লুক।
মগ রাজত্ব বা মুল্লুক
অনেকের মতে মগ মানেই আরাকানী আর মগের মুল্লুক মানে আরকান রাজ্য। ভৌগোলিকভাবে আরাকান বা বর্তমানের মায়ানমার রাজ্যটি হলো মগেদের দেশ, মানে আক্ষরিক অর্থে মায়ানমার হলো মগের মুলুক।
ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে বঙ্গভূমি ছিল খুব সমৃদ্ধশালী। তখনকার সময়ের আরব ভূগোলবিদদের ব্যাখ্যায় যে বন্দরটির কথা বারবার উঠে এসেছে, তা আসলে চট্টগ্রাম বন্দর।
আর এই বন্দরকে কেন্দ্র করেই মূলত বহু বণিক, যোদ্ধা তথা উপনিবেশিক জাতি বসতি গড়ে তোলে। এই বন্দরই ছিল বাংলার প্রধান সমুদ্রবন্দর।
ফলে নৌযোদ্ধা আরাকান চন্দ্রবংশীয় রাজা জলপথেই চট্টগ্রাম অভিযানে আসেন। তিনি এখানকার কিছু অঞ্চলে তার দখল পরিব্যাপ্ত করেন। সেই থেকে চট্টগ্রামে মগ রাজত্বের ভিত্তিভূমি রচিত হয়। সালটি সম্ভাব্য ৯৫৩ এর আশপাশে।
পরে সুলতানি আমলের শেষের ও মুঘল আমলে শুরু দিকে রাজ্যজুড়ে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়; তার সুযোগে আরাকান রাজারা চট্টগ্রামের বহুলাংশ তাদের অধিকারে নিয়ে নেন। এ সময় আরাকানিরা মগদস্যুতে পরিণত হয়ে সারা চট্টগ্রাম তথা বাংলার বহু অঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করে।
সে সময় মগ জলদস্যুরা বাংলার যে অবস্থা সৃষ্টি করেছিল—তা বর্ণনার অতীত।
মূলত ইউরোপীয় জলদস্যু যার বেশিরভাগই ছিল পর্তুগিজ, তাদের সহযোগিতায় মগদস্যুদের দৈরাত্ম্য শুরু হয়।
তাদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম থেকে বর্তমানের সাতক্ষীরা পর্যন্ত গোটা উপকূল সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।
একেই সাথে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে তাদের ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
এমনকি উপকূলীয় এলাকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত নদ-নদীর দুইধারের গ্রামগুলোও মনুষ্য বসবাসের যোগ্য ছিল না।
এরা নদীপথে চলাচল করে এবং গ্রামের পর গ্রামে লুটপাট চালাত। হেন অপকর্ম নেই, যা তারা করতে পারত না।
পর্যটক সোবাস্তিয়ান মানরিকের বিবরণে আছে, ১৬২৯ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে বঙ্গভূমি থেকে ১৮ হাজার মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে দিয়াঙ্গা ও আরাকানে বিক্রি করা হয়েছিল।
তবে বঙ্গভূমিতে তাদের এসব অপকর্মে পায়োনিয়ার ছিল পর্তুগিজ ‘হার্মাদ’ জলদস্যুরা। তারাই এর আগে বঙ্গভূমিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এই উভয় জাতিই পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকা বা জাহাজে যাযাবর জীবন যাপন করত এবং লুটপাট, ডাকাতি, অপহরণ—ইত্যাদিই ছিল তাদের মূল পেশা।
যামিনীমোহন ঘোষের ‘মগ রেইডার্স ইন বেঙ্গল’ এবং বার্নিয়েরের ভ্রমণকাহিনীতে মগদের অত্যাচারের কাহিনী পড়লে আজো গা শিউরে ওঠে।
ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ার মগদের লুণ্ঠন ও অত্যাচারের যে বিবরণ দিয়েছেন, তা পড়ে এখনো আমাদের রক্ত হিম হয়ে আসে।
শিহাবউদ্দিন মোহম্মদ তালিশ নামে মীর জুমলার এক রাজকর্মচারীর লেখাতেও বাঙ্গালিদের ওপর মগদের নির্মম অত্যাচারের বিবরণ আছে।
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলার উপকূলীয় এলাকায় মগ ও ফিরিঙ্গিদের অব্যাহত দৈরাত্ম্য সমাজ জীবনে এক অভিশাপরূপে আবির্ভূত হয়। তাদের এমন ত্রাসের রাজত্বের কারণে ‘মগের মুল্লুক’ কথাটির প্রচলন।
তখনকার তাদের এমন ভয়ানক রাক্ষুসে আচরণের নজির ইতিহাসে বিরল। সেই সময়কার মগদস্যুদের হিংস্রতার বয়ান মেলে একটি গীতিকায়-
‘সোনাবালি ছেনান করে শানো বান্ধা রে ঘাটে
তাহা দেখে মগম রাজারে নাও লাগাই লো তটে রে
আমি ক্যানবা আইলাম ঘাটে।
এক ডুব দুই ডুব তিন ডুবের কালে
চুল ধরিয়া মগম রাজারে তারে উঠায় নৌকার পরে রে।’
‘ফিরিঙ্গির দেশখান বাহে কর্ণধারে
রাত্রিতে বহিয়া যায় হার্মাদের ডরে।’
মগের মুল্লুকের অবসান
সুলতানি আমলের পরে মুঘল আমলেও সুবহে বাঙ্গালায় মগদের অত্যাচার অব্যাহত ছিল। বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৪ সালে বাংলার শাসনভার হাতে নিয়ে প্রথম নজর দেন মগের মুল্লুকের মগ জলদস্যুদের দমনে।
আরাকান-রাজের সৈন্যদলের মধ্যে অনেক মগ ও অবৈতনিক পর্তুগিজ সৈন্য ছিল। এরা বছরে বারোমাস লুণ্ঠন, অপহরণ ও অত্যাচার চালাত।
পুরো বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, তারা আসামেও অনেক অত্যাচার করে।
১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খাঁ সেনাপতি হুসেনবেগের সহায়তায় আরাকান-রাজকে সম্পূর্ণ পরাজিত করে মোগলদের হৃত-ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন; ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতি ওমেদ খাঁ ও হুসেনবেগ চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ দখল করে।
মুঘল শাসক শায়েস্তা খাঁর এই দুর্ধর্ষ অভিযানে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে চট্টগ্রাম থেকে পর্তুগিজ ও মগেরা অতি ক্ষিপ্রগতিতে ( অধিকাংশ ধনসম্পদ ঘড়ায় করে মাটিতে পুঁতে রেখে) পালিয়ে যায়।
তাদের এই পলায়নই ইতিহাসে ‘মগ ধাওনী’ নামে পরিচিত।
এইভাবে ১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খানের চট্টগ্রাম জয় করার পর গোটা বাংলায় “মগের মুল্লুক”-এর মগদের সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটে। এজন্য শায়েস্তা খাঁ এদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
গুপ্তধন ও কালাজাদুর রূপকথা
মগরা চলে গেলেও রেখে গেছে তাদের কলঙ্কিত ‘ঐতিহ্য’। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মগদের নিয়ে ছড়া প্রচলিত আছে ‘খাটো খাটো মগম রাজা, মুখে চাপা দাড়ি। তুমি হুকুম কর মগম রাজা আমরা দাঁড়ে মারি বাড়ি।’
মগদের নিয়ে যে মিথটি প্রচলিত, তা হলো তাদের গুপ্তধন আর কালোজাদু। মগ পুরোহিতরা ছিলেন জাদুবিদ্যায় পারদর্শী।
আর তাদের কালোজাদুকে কেন্দ্র করেই নানা রূপকথা ও ভীতির জন্ম হয়েছে শত শত বছর আগে।
পরাক্রমশালী এই মগগোষ্ঠী একসময় চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলেও পালানোর সময় যেসব ধনসম্পদ তারা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনি, তা প্রায় রাতারাতি পুঁতে ফেলে মাটির নিচে।
এই নিয়ে কত রূপকথার রাজ্যে বিনিদ্র চোখ আর স্বপ্নালু রাত কেটে গেছে অনেকের শৈশবে! তবে এসব কেবল মিথ ছিল না। কিছু তো ঐতিহাসিক সত্যতাও রয়েছে। অন্তত চট্টগ্রামের ইতিহাস তাই বলে।
তেলেইং বা ‘মগ’ থেকে মারমা
মগ আরাকান নিবাসী জাতি বিশেষ; জাতিতত্ববিদেরা এদের ইন্দো-চীন নিবাসী বলে মনে করেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই তেলেইংরা এদেশে মগ নামে পরিচিত ছিলেন।
তেলেইং থেকে মগ পরিচিতি কীভাবে এলো তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া না-গেলেও অনেকেই ধারণা করেন, মগ নামটি ‘মগধ’ শব্দজাত।
অর্থাৎ মগধের ধর্মের তথা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরাই মগ নামে পরিচিত হয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামে এসে।
তাছাড়া সে-সময় আরাকানিরাও নিজেদের মগধাতদের বংশধর বলে পরিচয় দিতেন।
তাই চট্টগ্রামের স্থানীয়দের কাছে আরাকান থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী তেলেইংরা মগ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।
কিন্তু ইতিহাসের নানা ঘটনার পরম্পরায় চট্টগ্রামের স্থানীয়দের কাছে এক সময় ‘মগ’ শব্দটি লুটতরাজ আর দস্যুতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
মানুষ মগ শব্দটিকে ঘৃণ্য একটি অভিধা হিসেবেই গ্রহণ করে।
একারণেই তারা নিজেদের মগ পরিচয় নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। ফলে পাকিস্তান আমল থেকে তারা নিজেদের আরাকানের মারমা জনগোষ্ঠীর অংশ বলে দাবি করেন।
যদিও প্রাচীন আরাকানে মারমা নামের কোনো জনগোষ্ঠীর বসবাসের প্রমাণ খুঁজে পান নি ইতিহাসবিদরা।
মারমাদের ‘ইংরা হংপ্রা’ অর্থাৎ ‘প্রাচীন বসতি এলাকা’
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্কেলসমূহ গঠিত হলে কং হ্লা প্রু পরিবারের খেতাবের স্মারক হিসেবেই গঠিত হয় বোমাং সার্কেল।
বর্তমানে বোমাং রাজার বাড়ি বান্দরবান শহরে। বলা চলে বোমাং রাজার বাড়িকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে অরণ্যময় শহর বান্দরবান।
তবে বোমাং রাজপরিবার বান্দরবান আসার আগে নানাস্থানে বিভিন্ন সময় অবস্থান করেছে।
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ার অন্তর্গত বাজালিয়া গ্রামের শঙ্খ নদীর খায়েরুজ্জামান চৌধুরী চরে কিছুকাল অবস্থান করে বোমাং রাজপরিবার।
এই এলাকাটি এখনও বান্দরবানের মারমাদের কাছে ‘ইংরা হংপ্রা’ অর্থাৎ ‘প্রাচীন বসতি এলাকা’ হিসেবে পরিচিত।
কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, কং হ্লা প্রু ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে আরাকান থেকে চট্টগ্রামে ফিরে আসার পর এই রাজপরিবার তাদের অনুগত তেলেইং জনগোষ্ঠীকে নিয়ে রামু, ঈদগাহ, মাতামুহুরী নদীর তীর, এমনকি মহেশখালীতেও বসবাস করেছেন।
মগদের ঢাকা লুট ও মগবাজার
বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠালগ্নে বারোভূঁইয়ারা দুর্বল হয়ে পড়লে মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
মুঘল আমলেই মগরা তিন তিনবার ঢাকা লুণ্ঠন করে।
যতীন্দ্রমোহন রায়ের ঢাকার ইতিহাসে লেখা হয়েছে, ‘নবাব খানজাদ খাঁ এরূপ ভীরু স্বভারের লোক ছিলেন যে, তিনি মগের ভয়ে ঢাকা নগরীতে অবস্থান করিতেন না।
মোল্লা মুরশিদ ও হাকিম হায়দারকে ঢাকায় প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া তিনি রাজমহলে অবস্থান করিতেন।
মগরা ঢাকা আক্রমণ করলে এই দুই প্রতিনিধি নগরী রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
যতীন্দ্রমোহন লিখেছেন, ‘মগী সৈন্যের তাণ্ডব নৃত্যে ঢাকা শহর টলটলায়মান হইয়াছিল।
উহারা নগর ভস্মসাৎ করিয়া প্রচুর ধনরাশি লুণ্ঠন ও আবালবৃদ্ধ নির্বিশেষে বহুলোক বন্দী করিয়া চট্টগ্রাম প্রদেশে লইয়া যায়।’
ইতিহাসে তিনবার ঢাকা লুণ্ঠনের উল্লেখ থাকলেও কেবল ১৬২০ সালে হামলার বিবরণ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে ঢাকা নগরীর মগবাজার নামের সঙ্গে মিশে আছে এই মগদেরই স্মৃতি। তবে তারা এই জায়গাটি দখল করে বসেছিল, তা নয়।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প: বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র
- ইতিহাসের সাক্ষী চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি: নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে ৭৩১ যোদ্ধা
- কর্ণফুলী নদী: হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের অমর সাক্ষী!
এই নামের উত্পত্তি কিভাবে, তা নিয়ে একাধিক মত থাকলেও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হল, ইংরেজ আমলে আরাকান থেকে কিছু মগ ব্রিটিশ রাজের আশ্রয় কামনা করেছিল।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তত্কালীন ঢাকা শহর থেকে তিন মাইল উত্তরে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করেন। সেই মগরা যেখানে বসবাস করত, সেই এলাকাটিই এখন সবার কাছে মগবাজার নামে পরিচিত।