চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম নগরীর একমাত্র নির্বাচিত সংস্থা। চট্টগ্রাম পৌরসভা গঠিত হয় ২২ জুন ১৮৬৩ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর ইতিহাস প্রায় ১৫৮ বছরের পুরনো। ১৯৯০ সালের পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার প্রায় ১২৭ বছর আগে এ অঞ্চলের প্রাচীনতম পৌরসভা ‘চট্টগ্রাম পৌরসভা বা চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি’ গঠিত হয়।
১৮৬৩ সালের ২২ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি’। ১৯৭৭ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির নাম পরিবর্তিত করে ‘চট্টগ্রাম পৌরসভা’ নামকরণ করা হয়।
জে ডি ওয়ার্ড ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম প্রশাসক এবং খান বাহাদুর আবদুচ ছত্তার ছিলেন প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আর চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন ফজল করিম।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বেলা বিস্কুট’ উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট!
- চট্টগ্রাম কলেজ: সার্ধ-শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- কর্ণফুলী নদী: হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের অমর সাক্ষী!
চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির শাসনের সুবিধার্থে সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল ৪টি ওয়ার্ড। এরপর ১৯১১ সালে আরেকটি বাড়িয়ে এ, বি. সি. ডি. ই নামে ৫ ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয় এ পৌরসভাকে।
চট্টগ্রাম পৌরসভাকে ‘চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশনে’ উন্নীত করা হয় ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর; এর কয়েক বছর পর ১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তিত করে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ নামকরণ করা হয়।
পৌরসভা থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
ব্রিটিশ আমলে চিটাগং ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার অনুযায়ী ১৮৬৩ সালের ১ জুন তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জে.ডি. ওয়ার্ডকে চেয়ারম্যান করে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কমিটি গঠিত হয়।
এরপর ১৮৬৩ সালের ২৩ জুন চট্টগ্রাম নগরীর নতুন রাস্তা, লেন, গলি, আলো, পানি নিষ্কাশনে নালা-নর্দমা ইত্যাদি প্রশস্তকরণ, শহরের শ্রীবৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুবিধা উন্নয়নে লক্ষণীয় চট্টগ্রাম পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
৪টি ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম পৌরসভা বা চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটিকে’ ১৯১১ সালে আরেকটি বাড়িয়ে এ, বি. সি. ডি. ই নামে ৫ ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
সে সময়ে এ শহরের জনসংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ২৫ হাজার। চট্টগ্রাম পৌরসভার ঐ সময় সীমানা ছিল সাড়ে ৪ বর্গমাইল।
চট্টগ্রাম পৌরসভা, পৌর কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ১৯৮২ সালে। ১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই গঠিত হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
প্রথম মনোনীত মেয়র হন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে মেয়র মনোনীত হন মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
এক নজরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
- মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয় ২২ জুন ১৮৬৩
- প্রথম চেয়ারম্যান (নির্বাচিত) খান বাহাদুর আব্দুস সাত্তার
- মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন গঠিত হয় ১৬ সেপ্টম্বার ১৯৮২
- সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ৩১ জুলাই ১৯৯০
- প্রথম মেয়র (মনোনীত) মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী
- প্রথম নির্বাচিত মেয়র এ. বি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী
- সর্বশেষ মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন
- বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন
১৯৯৪ সালে এ কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এরপর ২০০০, ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী হ্যাটট্টিক মেয়র পদে বিজয়ের গৌরব অর্জন করেন।
২০১০ সালে চতুর্থ দফার নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫ম দফার নির্বাচন মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমানে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪১টি এবং মোট আয়তন ১৬০.৯৯ বর্গ কিলোমিটার।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ড
- ১নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ পাহাড়তলী
- ২নং ওয়ার্ড – জালালাবাদ
- ৩নং ওয়ার্ড – পাঁচলাইশ
- ৪নং ওয়ার্ড – চান্দগাঁও
- ৫নং ওয়ার্ড – মোহরা
- ৬নং ওয়ার্ড – পূর্ব ষোলশহর
- ৭নং ওয়ার্ড – পশ্চিম ষোলশহর
- ৮নং ওয়ার্ড – শুলকবহর
- ৯নং ওয়ার্ড – উত্তর পাহাড়তলী
- ১০নং ওয়ার্ড – উত্তর কাট্টলী
- ১১নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ কাট্টলী
- ১২নং ওয়ার্ড – সরাইপাড়া
- ১৩নং ওয়ার্ড – পাহাড়তলী
- ১৪নং ওয়ার্ড – লালখান বাজার
- ১৫নং ওয়ার্ড – বাগমনিরাম
- ১৬নং ওয়ার্ড – চকবাজার
- ১৭নং ওয়ার্ড – পশ্চিম বাকলিয়া
- ১৮নং ওয়ার্ড – পূর্ব বাকলিয়া
- ১৯নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ বাকলিয়া
- ২০নং ওয়ার্ড – দেওয়ান বাজার
- ২১নং ওয়ার্ড – জামালখান
- ২২নং ওয়ার্ড – এনায়েত বাজার
- ২৩নং ওয়ার্ড – উত্তর পাঠানটুলী
- ২৪নং ওয়ার্ড – উত্তর আগ্রাবাদ
- ২৫নং ওয়ার্ড – রামপুর
- ২৬নং ওয়ার্ড – উত্তর হালিশহর
- ২৭নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ আগ্রাবাদ
- ২৮নং ওয়ার্ড – পাঠানটুলী
- ২৯নং ওয়ার্ড – পশ্চিম মাদারবাড়ী
- ৩০নং ওয়ার্ড – পূর্ব মাদারবাড়ী
- ৩১নং ওয়ার্ড – আলকরণ
- ৩২নং ওয়ার্ড – আন্দরকিল্লা
- ৩৩নং ওয়ার্ড – ফিরিঙ্গি বাজার
- ৩৪নং ওয়ার্ড – পাথরঘাটা
- ৩৫নং ওয়ার্ড – বকশীর হাট
- ৩৬নং ওয়ার্ড – গোসাইলডাঙ্গা
- ৩৭নং ওয়ার্ড – উত্তর মধ্য হালিশহর
- ৩৮নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ মধ্য হালিশহর
- ৩৯নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ হালিশহর
- ৪০নং ওয়ার্ড – উত্তর পতেঙ্গা
- ৪১নং ওয়ার্ড – দক্ষিণ পতেঙ্গা
প্রথম নির্বাচিত মেয়র
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তিনি ১৯৯৪ সালে টানা তিনবারে প্রায় ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন।
মহিউদ্দীন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম।
ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যান।
সর্বশেষ চসিক প্রশাসক
চসিকের নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ বুধবার (২০২০ সালের ৫ আগস্ট) শেষ হওয়ার পর করোনা ভাইরাসের ফলে নির্বাচন স্থগিত থাকার কারণে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সর্বশেষ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (উন্নীতকরণ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) প্রশাসক এবং মেয়রগণের তালিকা
- মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মেয়র (মনোনীত); ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ থেকে ৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত।
- এম. এ. বারী (বিভাগীয় কমিশনার), মেয়র (ভারপ্রাপ্ত); ১৩ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১১ মে ১৯৯১ পর্যন্ত।
- মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, মেয়র (মনোনীত); ১২ মে ১৯৯১ থেকে ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৩ পর্যন্ত।
- ওমর ফারুক (বিভাগীয় কমিশনার), প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত); ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ থেকে ১০ মার্চ ১৯৯৪ পর্যন্ত।
- এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, প্রথম নির্বাচিত মেয়র; ১১ মার্চ ১৯৯৪ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ পর্যন্ত।
- মোহাম্মদ মনজুর আলম, মেয়র; ২০ জুন ২০১০ থেকে ২৭ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত।
- আ জ ম নাছির উদ্দিন, মেয়র; ২৮ মার্চ ২০১৫ থেকে ৫ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত।
- খোরশেদ আলম সুজন, প্রশাসক (মনোনীত); ৫ আগস্ট ২০২০ থেকে বর্তমান ।
২০২০ সালের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হলে মার্চের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
সর্বশেষ চসিক নির্বাচন ২৭ জানুয়ারি
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন হবে।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- বদর শাহ মাজার: চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন ইমারত হিসেবে স্বীকৃত
- জব্বারের বলীখেলা: শত বছরের পুরনো এক সার্বজনীন উৎসব
- চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: চট্টগ্রামের বনেদী ‘সওদাগরী পাড়া’
২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এই ঘোষণা দেন।
সর্বশেষ চসিক নির্বাচনের ফলাফল
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
নির্বাচনেযত ভোট বৈধ হয়েছে, তার ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটই পড়েছে নৌকায়। এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এত বেশি ব্যবধানে কেউ জেতেননি।
৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি ফলাফল অনুযায়ী কেন্দ্রে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ভোট পেয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজার ২৪৮ ।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৭৯ ভোট।
অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে চার হাজার ৯৮০ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম ( যদিও তিনি এই নির্বাচন বর্জন করেন)।
চতুর্থ হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনসুর। তিনি পেয়েছেন চার হাজার ৬৫৩ ভোট। পঞ্চম স্থানে আছেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এম এ মতিন। তার ভোট দুই হাজার ১২৬।
ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ। তিনি পেয়েছেন এক হাজার ১০৯ ভোট।
আর ভোটের হিসেবে সবার নিচে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৮৮৫।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবকটিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৯টিতে জয় নতুনদের। এবারই প্রথম চসিকের কোনো ওয়ার্ডে জয় পাননি বিএনপির কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গঠনের পর ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে পাঁচটিতেই জয় পেল আওয়ামী লীগ। আর এবারের নির্বাচনেই ভোটের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি।