চট্টগ্রামের ‘মধু ভাত‘ মধুর মতোই মুখে লেগে থাকে। মধুভাত একধরনের শীতকালীন মিষ্টান্ন খাবার যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পিঠা খাবারের একটি।
টোনাটুনির গল্পে পিঠা বানানোর কথা তো আমরা অনেক শুনেছি। সেই যে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি- টোনা বাজার থেকে চাল আনলো, গুড় আনলো, টুনি আগুন জ্বালালো; করলো পিঠা বানানোর আয়োজন।
গ্রাম বাংলার পিঠা বানানোর আয়োজন ঠিক তেমনই। খুব উৎসবমুখর পরিবেশে পিঠা তৈরি হয়।
প্রাচীনকালে পিঠাকে মিষ্টান্নের মধ্যেই ধরা হতো। ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পিষ্টক’ শব্দ থেকে। আবার ‘পিষ্টক’ এসেছে ‘পিষ’ ক্রিয়ামূলে তৈরি হওয়া শব্দ ‘পিষ্ট’ থেকে।
পিষ্ট অর্থ চূর্ণিত, মর্দিত, দলিত। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ বইয়ে লিখেছেন, পিঠা হলো চালের গুঁড়া, ডাল বাটা, গুড়, নারিকেল ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি মিষ্টান্নবিশেষ।
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। ধান থেকে চাল হয় এবং সেই চালের গুঁড়া পিঠা তৈরির মূল উপকরণ।
অন্যদিকে, দইজ্জার (দরিয়ার) কুলে বসত গড়া চট্টগ্রামের মানুষগুলোর হৃদয় ও সমুদ্রের মতোই বিশাল।
অতিথির পাতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রান্না তুলে দেওয়া চাই–ই।
তেমনই চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা খাবার ‘মধু ভাত’। মধু ভাত একধরনের শীতকালীন মিষ্টান্ন খাবার যা মধুর মতোই মুখে লেগে থাকে।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- জিভে জল আনা চাটগাঁইয়া (মেজবান) মেজ্জানের একাল-সেকাল
- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বেলা বিস্কুট’ উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট!
- চন্দনাইশের পেয়ারা: পথ দেখাচ্ছে স্বাদের ‘কাঞ্চন নগরের গয়াম’
মূলত চাল, জালা চাল, নারকেল, দুধ এবং চিনির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়।
বীজ ধানের চাল (জালা চাল হিসেবে খ্যাত) না দিলে মধুভাত হয় না। এটি সাধারণত আশ্বিন ও কার্তিক মাসে খাওয়া হয়।
মধুভাতের প্রধান বৈশিষ্ঠ হলো এই ভাত রাতে রান্না করে, ঢেকে ভালোভাবে মুখ বন্ধ করে এক রাত রেখে দিতে হবে।
পরের দিন নারকেল দিয়ে পরিবেশন করতে হবে মধু ভাত।
আরেকটি বিশেষত্ব হল এই শর্করা জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ ঢেকে রাখার ফলে গাঁজন প্রক্রিয়ার এতে কিছুটা অ্যালকোহল উৎপাদিত হয়, ফলে মধু ভাত খাবার পর ঝিমুনি আসে।
এই কারণে চট্টগ্রামে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ‘মধু ভাত’ যেভাবে তৈরি করবেন:
প্রয়োজনীয় উপকরণ
জালা চাউল, বিনি চাউল, নারকেল, পানি
প্রস্তুত প্রণালী
ধানগুলোকে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর এগুলোতে যদি অঙ্কুরিত হলে সাথে সাথে পানি থেকে উঠিয়ে নিতে হবে রৌদ্র দিতে হবে যতদিন না শুকায় তারপর ধান মাডায় করে চাল নিতে হবে।
চালগুলো গুড়ো করতে খেয়াল রাখতে হবে যেন পুর্ণ গুড়ো না হয়। তারপর গুড়োগুলো রৌদ্রে শুকাবেন। তৈরি হয়ে গেল আপনার জালা চালের গুড়ো।
মধুভাত তৈরি
প্রয়োজন মাফিক বিনি চাল নিবেন তারপর এটি রান্না করবেন, রান্না করার পর গরম থাকাকালীন জালাচালের গুড়োর সাথে মিশিয়ে নিবেন ভাল করে। তারপর ঠান্ডা করবেন।
মসরুর জুনাইদ-এর ব্লগে আরও পড়ুন-
- ঐতিহ্যবাহী গুমাই বিল: চট্টগ্রামের শস্য ভাণ্ডার
- ফটিকছড়ির চা বাগান: সৌন্দর্য্যের আধার, উৎপাদনেও সেরা!
- চুনতি অভয়ারণ্য: এশিয়ান হাতির প্রজননক্ষেত্র
এরপর অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে প্রয়োজন মত লবন ও চিনি দিয়ে একটা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল বা মাটির পাতিলে রেখে দিবেন।
চামচ বা নাড়ানি কাঠি দিয়ে মিশ্রণ করবেন মনে রাখবেন হাতে স্পর্শ করা যাবে না। তারপর ওই পাত্রে সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে নারকেল দিয়ে পরিবেশন করুন স্বাদের মধুভাত।